Probhat Songeet and sondhya Songeet by Rabindranath Tagore

                      

                                  দৃষ্টি 

বুঝি গো সন্ধ্যার কাছে                শিখেছে সন্ধ্যার মায়া 
                          ওই আঁখিদুটি ,
চাহিলে হৃদয় পানে                      মরমেতে পরে ছায়া ,
                        তারা উঠে ফুটি ।
আগে কে জনিত বলো                কত কি লুকানো ছিল 
                         হৃদয়নিভৃতে --
তোমার নয়ন দিয়া                    আমার নিজের হিয়া 
                      পাইনি দেখিতে ।
কখনো গাও নি তুমি ,                 কেবল নীরবে রহি 
                       শিখায়েছ গান -
স্বপ্নময় শান্তিময়                         পুরোবিরাগিণীতানে 
                      বাঁধিয়েছ প্রাণ ।
আকাশের পানে চাই,                   সে সুরে গান গাই 
                      একেলা বসিয়া ।
একে একে সুরগুলি                      অনন্তে হারায়ে যায় 
                     আঁধারে পশিয়া ।।



                          সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় 

দেশশূন্য কালশুন্য জ্যোতিঃশুন্য  মহাশূন্য - 'পরি
               চতুর্মুখ করিছেন ধ্যান ।
     সহসা আনন্দসিন্ধু হৃদয়ে উঠিল উথলিয়া ,
              আদিদেব খুলিলা নয়ান ।
              চারি মুখে বাহিরিল বাণী ,
              চারি দিকে করিল প্রয়াণ ।
              সীমাহারা মহা-অন্ধকারে
              সীমাশূন্য ব্যোমপরিবারে
              প্রাণপূর্ণ ঝটিকার মতো ,
              আশাপূর্ণ অতৃপ্তির প্রায় ,
              সঞ্চারিতে লাগিল সে ভাষা ।।

আনন্দের আন্দোলনে               ঘন ঘন বহে শ্বাস ,
            অষ্ট নেত্রে বিস্ফুরিল জ্যোতি ।
জ্যোতির্ময় জটাজাল               কোটিসূর্যপ্রভা বহি
             দিগ্বিদিকে পড়িল ছড়ায়ে ।।

                জগতের গঙ্গোত্রিশিখর হ্বতে
                                      শত শত স্রোতে
                উচ্ছসিল অগ্নিময় বিশ্বের নির্ঝর,
                                   স্তব্ধতার পাষাণহৃদয়
                                   শত ভাগে গেল বিদীরিয়া ।।

               নূতন সে প্রাণের উল্লাসে
               নূতন সে প্রাণের উচ্ছ্বাসে
               বিশ্ব যবে হয়েছে উন্মাদ ,
               অনন্ত আকাশে দাঁড়াইয়া
               চারি দিকে চারি হাত দিয়া
               বিষ্ণু আসি কৈলা আশীর্বাদ ।
               লইয়া মঙ্গলশঙ্খ করে
               কাঁপায়ে জগৎ-চরাচরে
               বিষ্ণু আসি কৈলা শংখনাদ ।
               থেমে এলো প্রচন্ড কল্লোল,
               নিতে এল জ্বলন্ত উচ্ছ্বাস,
               গ্রহগণ নিজ অশ্রুজলে
               নিভাইল নিজের হুতাশ ।
               জগতের মহাবেদব্যাস
               গঠিলা নিখিল-উপন্যাস ,
               বিশৃঙ্খল বিশ্বগীতি লয়ে
               মহাকাব্য করিলা রচন ।
               চক্রপথে ভ্রমে গ্রহ তারা ,
               চক্রপথে রবি শশী ভ্রমে,
              শাসনের গদা হস্তে লয়ে
              চরাচর রাখিলা নিয়মে ।
               মহাছন্দ মহা-অনুপ্রাস
               শূন্যে শূন্যে বিস্তারিল পাশ ।।

               অতল মানস সরোবরে
              বিষ্ণুদেব মেলিল নয়ন ।
              আলোককমলদল হতে
              উঠিল অতুল রূপরাশি ।
              ছড়ালো লক্ষীর হাসিখানি --
              মেঘেতে ফুটিল ইন্দ্রধনু,
              কাননে ফুটিল ফুলদল ।
              জগতের মত্ত কোলাহল
              রাগিণীতে হল অবসান ।
              কোমলে কঠিন লুকাইল ,
              শক্তিরে ঢাকিল রূপরাশি ।।

মহাছন্দে বন্দী হল যুগ-যুগ-যুগ-যুগান্তর--
             অসীম জগৎ চরাচর
             অবশেষে শ্রান্তকলেবর,
             নিদ্রা আসে নয়নে তাহার,
             আকর্ষণ হতেছে শিথিল,
             উত্তাপ হতেছে একাকার ।
             জগতের প্রাণ হতে
             উঠিল আকুল আর্তস্বর --
             'জাগো জাগো জাগো মহাদেব,
             অলঙ্ঘ্য নিয়ম পথে ভ্রমি
             হয়েছে বিশ্রান্ত কলেবর,
             আমারে নুতন দেহ দাও ।
             গাও, দেব, মরণসংগীত --
             পাব মোরা নুতন জীবন ।'

             জাগিয়া উঠিল মহেশ্বর ,
             তিন কাল  ত্রিনয়ন মেলি
             হেরিলেন দিক-দিগন্তর ।
প্রলয় পিনাক তুলি                    করে ধরিলেন শূলী
              পদতলে জগৎ চাপিয়া,
জগতের আদি অন্ত                   থরথর থরথর
                      উঠিল কাঁপিয়া ।
ছিঁড়িয়া পড়িয়া গেল জগতের সমস্ত বাঁধন ।
উঠিল অসীম শূন্যে গরজিয়া তরঙ্গিয়া
ছন্দোমুক্ত জগতের উন্মত্ত আনন্দকোলাহল ।
              মহাঅগ্নি উঠিল জ্বলিয়া --
              জগতের মহাচিতানল ।
খন্ড খন্ড রবি শশী,                 চূর্ন চূর্ন গ্রহ তারা
               বিন্দু বিন্দু আঁধারের মতো
               বরষিছে চারি দিক হতে,
               অনলের তেজোময় গ্রাসে
               মুহূর্তেই যেতেছে মিশায়ে ।
               সৃজনের আরম্ভ-সময়ে
               আছিল অনাদি অন্ধকার,
               সৃজনের ধ্বংস-যুগান্তরে
               রহিল অসীম হুতাশন ।
অনন্ত আকাশ গ্রাসী অনলসমুদ্র মাঝে
               মহাদেব মুদি ত্রিনয়ান
               করিতে লাগিলা মহাধ্যান ।।




                      নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ 


আজি এ প্রভাতে রবির কর
              কেমনে পশিল প্রাণের 'পর
      কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাত পাখির গান !
 না জানি কেনরে এতো দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
                  জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
         ওরে উথলি উঠিছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।
                  থর থর করি কাঁপিছে ভূধর
                  শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে
                  ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল
                  গরজি উঠিছে দারুন রোষে
                  হেথায় হেথায় পাগলের প্রায়
                  ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায় -
বাহিরিতে চায়, দেখিতে না পায় কোথায় কারার দ্বার।
                  কেন রে বিধাতা পাষান হেন,
                  চারিদিকে তার বাঁধন কেন !
                  ভাঙ রে হৃদয় , ভাঙ রে বাঁধন,
                  সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন
                  লহরির পরে লহরী তুলিয়া
                  আঘাতের 'পরে আঘাত কর।
                  মাতিয়া যখন উঠেছে পরান
                  কিসের আঁধার কিসের পাষাণ !
                  উথলি যখন উঠেছে বাসনা
                  জগতে তখন কিসের ডর !

                 আমি  ঢালিব করুনাধারা
                 আমি ভাঙিব পাষাণকারা
                 আমি জগৎ প্লাবিয়া বেড়াব  গাহিয়া
                            আকুল পাগল-পারা
                 কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া,
                 রামধনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া,
রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিবো রে পড়ান ঢালি।
                 শিখর হইতে শিখরে ছুটিব
                 ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব ,
হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি।
এত  কথা আছে , এত গান আছে , এত প্রাণ আছে মোর,
এতো সুখ আছে , এতো সাধ আছে - প্রাণ হয়ে আছে ভোর ।।
কি জানি কি হলো আজি, জাগিয়া উঠিল প্রাণ -
দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান।
                  ওরে, চারিদিকে মোর
                  এ কী কারাগার ঘোর -
ভাঙ ভাঙ ভাঙ কারা , আঘাতে আঘাত কর।
ওরে আজ           কি গান গেয়েছে পাখি,
                        এসেছে রবির কর ।।




          প্রভাত-উৎসব 

হৃদয় আজি মোর কেমনে গেল খুলি ,
জগৎ আসি সেথা করিছে কোলাকুলি ।
প্রভাত হল যেই কিজানি কি হল একি ,
আকাশ-পানে চাই কি জানি কারে দেখি ।।

পুরব মেঘ মুখে পড়েছে রবিরেখা ,
অরুনরথচূড়া আধেক যায় দেখা ।
তরুণ আলো দেখে পাখির কলরব ,
মধুর আহা কিবা মধুর মধু সব ।।

আকাশ, 'এসো এসো ' ডাকিছ বুঝি ভাই --
গেছি তো তোরি বুকে , আমি তো হেথা নাই ।
প্রভাত-আলো-সাথে ছড়ায় প্রাণ মোর ,
আমার প্রাণ দিয়ে ভরিব প্রাণ তোর ।।

ওঠো হে ওঠো রবি, আমারে তুলে লও ,
অরুণতরী তব পুরবে ছেড়ে দাও ।
আকাশ পারাবার বুঝি হে পার হবে --
আমারে লও তবে, আমারে লও তবে ।।

Konika by Rabindranath Tagore

কণিকা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

হাতে কলমে 

বোলতা কহিল এ যে ক্ষুদ্র মৌচাক ,
এরই তরে মধুকর এতো করে জাক !
মধুকর কহে তারে, তুমি এস ভাই ,
আরো ক্ষুদ্র মৌচাক রচো দেখে যাই ।।



গৃহভেদ

 আম্র কহে, একদিন , হে মাকাল ভাই,
আছিনু বনের মধ্যে সমান সবাই ;
মানুষ লইয়া এল আপনার রুচি --
মূল্যভেদ শুরু হল সাম্য গেল ঘুচি ।।


গরজের আত্মীয়তা 

কহিল ভিক্ষার ঝুলি টাকার থলিরে ,
আমরা কুটুম্ব দোঁহে ভুলে গেলি কি রে ?
থলি বলে, কুটুম্বিতা তুমিও ভুলিতে
আমার যা আছে গেলে তোমার ঝুলিতে ।।


কুটুম্বিতা 

কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে ,
ভাই বলে ডাকো যদি দেব গলা টিপে ।
হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা ;
কেরোসিন বলি উঠে , এস মোর দাদা ।।


উদারচরিতানাম 

প্রাচীরের ছিদ্রে এক নামগোত্রহীন
ফুটিয়াছে ফুল এক অতিশয় দীন ।
ধিক-ধিক করে তারে কাননে সবাই ;
সূর্য উঠি বলে তারে , ভালো আছো ভাই ?।


অসম্ভব ভালো

যথাসাধ্য ভালো বলে, ওগো আরো-ভালো ,
কোন স্বর্গপুরী তুমি করে থাকো আলো ?
আরো-ভালো কেঁদে কহে, আমি থাকি হায়
অকর্মন্য দাম্ভিকের অক্ষম ঈর্ষায় ।।


প্রত্যক্ষ প্রমান 

বজ্র কহে , দূরে আমি থাকি যতক্ষণ
আমার গর্জন বলে মেঘের গর্জন ,
বিদ্যুতের জ্যোতি বলি মোর জ্যোতি রটে ,
মাথায় পড়িলে তবে বলে -- 'বজ্র বটে !'


ভক্তিভাজন

রথযাত্রা , লোকারণ্য, মহাধুমধাম --
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম ।
পথ ভাবে 'আমি দেব' রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব' -- হাসে অন্তর্যামী ।।


উপকারদম্ভ 

শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ্ করি শির ,
লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলাম শিশির ।।


সন্দেহের কারণ 

'কতো বড়ো আমি ' কহে নকল হীরাটি ।
তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি ।।


অকৃতজ্ঞ 

ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সোডা ব্যাঙ্গ করে ,
ধ্বনি কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে ।।


নিজের ও সাধারণের

চন্দ্র কহে, বিশ্বে আলো দিয়েছি ছড়ায়ে ,
কলঙ্ক যা আছে তাহা আছে মোর গায়ে ।।


মাঝারির সতর্কতা 

উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে ,
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে ।।


নতিস্বীকার 

তপন-উদয়ে হবে মহিমার ক্ষয় ,
তবু প্রভাতের চাঁদ শান্তমুখে কয় ,
অপেক্ষা কোরিয়া আছি অস্তসিন্ধুতীরে
প্রণাম করিয়া যাব উদিত রবিরে ।।

কর্তব্যগ্রহণ 

কে লইবে মোর কার্য , কহে সন্ধ্যারবি --
শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি ।
মাটির প্রদীপ ছিল সে কহিল স্বামী ,
আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি ।।


ধ্রুবাণি তস্য নশ্যন্তি 

রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা ।।


মোহ 

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস ,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস ।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে --
কহে, যাহা কিছু সুখ সকলই ও পারে ।।

ফুল ও ফল 

ফুল কহে ফুকারিয়া , ফল ওরে ফল ,
কতদূরে রয়েছিস বল মোর বল !
ফল কহে মহাশয় কেন হাঁকাহাঁকি --
তোমারি অন্তরে আমি নিরন্তর থাকি ।।


প্রশ্নের অতীত

হে সমুদ্র, চিরকাল কী তোমার ভাষা ?
সমুদ্র কহিল মোর অনন্ত জিজ্ঞাসা ।
কিসের স্তব্ধতা তব ওগো গিরিবর ?
হিমাদ্রি কহিল, মোর চিরনিরুত্তর ।।


মোহের আশংকা 

শিশু পুস্প আঁখি মেলি হেরিল এ ধরা  --
শ্যামল, সুন্দর, স্নিগ্ধ, গীত-গন্ধ ভরা ;
বিশ্বজগতেরে ডাকি কহিল - হে প্রিয়,
আমি যতকাল থাকি তুমিও থাকিয়ো ।।


চালক 

অদৃষ্টেরে শুধালেম, চিরদিন পিছে
অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে ?
সে কহিল, ফিরে দেখো । দেখিলাম থামি ,
সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি ।।


এক পরিণাম 

শেফালি কহিল, আমি ঝরিলাম তারা !
তারা কহে, আমারো তো হল কাজ সারা --
ভরিলাম রজনীর বিদায়ের ডালি
আকাশের তারা আর বনের শেফালি ।।


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~




Drawing tutorial 032 - Drawing hands

Drawing hands is probably considered as one of the most difficult anatomical features for any artist. That is partially because of the complex anatomy of the hands and partially because of so many different shapes that a hand can take each of which can look different from different angles thus taking the variation to challengingly difficult numbers. It is hard to remember so many shapes and render it accurately.

But here is good news !! With some good method to draw and some practice, hand drawing can be breeze. Here we shall learn to draw hands by knowing basic shapes that are its building blocks and then adding features to the basic building blocks.

Palm of the hand is almost a flat rectangle. The side towards the little finger is bulging outward a  little. Also, the base of the thumb is outside the base rectangle. The top is also not straight. It curves upward, the base of middle finger being top point of the curve. The dorsal side is little bulging outside and the anterior side is little concave.These are shown in the following illustration.

Bogamati - new destination for picnic goers in Assam- a leisure trip to chill out



We heard about Bogamati as a picnic spot from some two years back and in recent times we heard it even more frequently as an attraction for picnic goers. Before the Bihu Holidays therefore Baruah Sir came to me and asked if I wanted to accompany him for a trip to Bogamati. I replied in affirmative instantly knowing that four days at home with only work would become boring and a trip anywhere will be refreshing.

Bogamati is situated in (Indo-) Bhutan border around 80 km north of Guwahati. There is no railway connectivity towards that north from Guwahati and therefore the best way to reach the place is on road. The location is now in Baksa district of BTAD and has seen some infra development during the Hagrama regime. The road is good upto the spot and anyone with a smartphone can reach the place. But be aware ! Your mobile network will not work there and it is advised to note the same before you move towards this place.

After crossing Naokata, the large yards to beetle nut trees captivates the visitor's eyes. Its beetle nut trees everywhere. Grown up trees bearing fruits, young trees and saplings all over the place gives a soothing green background to the villages by the side of the pitch road. Road being good, the drive is a charming one.

After a drive of around 80 km with a halt at Baihata Chariali we reached the spot at around twelve. The spot for picnic is located by the side of Lokhaitora river which is more widely known as Puthimari river in the plains. Water was at its lowest presumably due to the winter season that was just over. A few pre-monsoon showers haven't added to the rivers vigour it seemed. But the cool and clear water was enough to captivate any person who loves nature. The administration recently created a parking lot but was completely empty as there was no picnic goer except a group of youths. 

Clear water, white pebbles and a blue sky - a place called Bogamati

We parked the car, had some light snacks that we took with us and then headed towards the water. The water streams had gone slim and a vast width of the river bed was just sand and mud. It seemed the stream carries a lot of mud too which settles down below the water making it slippery and very very difficult to walk. We carefully walked through the stream and went to the main water stream. I was surprised to see that peoples of the nearby villages were fishing in the stream with currents and that too with a fishing net. A group was also using eletrofishing to catch fish legality of which is questionable.

The group(sans author)


We took long bath in the cool water. It felt amazing to get the cold water flowing over your body and quickly dried by sun one out of water. For a long time we played with water and enjoyed the soothing bath. After the bath was over, we started collecting pebbles and boulders of our choice for decorating gardens and others ornamental uses. Baruah Sir, a collector of pebbles for decorating his garden in front of his house,  docked huge boulders in the car's dicky. The rocks thus loaded in the dickey at one point seemed would bend the dickey's floor but somehow it did not give away. The powerful engine of the car dragged out the 'payload' from the river bank to the road through bumpy patches of the rocky trail.

The author enjoying a refreshing bath

We had our late lunch at around four in the afternoon at a highway dhaba near Baihata Chariali and returned to City refreshed by nature. 



Noibedyo - Rabindranath Tagore - নৈবেদ্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

                জনারণ্য 

মধ্যাহ্নে নগর মাঝে পথ হতে পথে
কর্মবন্যা ধায় যবে উচ্ছলিত স্রোতে
শত শাখা প্রশাখায় নগরের নাড়ী
উঠে স্ফীত তপ্ত হয়ে, নাচে সে আছাড়ি
পাষাণভিত্তির 'পরে  - চৌদিক আকুলি
ধায় পান্থ, ছুটে রথ , উড়ে শুস্ক ধূলি –
তখন সহসা হেরি মুদিয়া নয়ন
মহাজনারণ্য-মাঝে অনন্ত নির্জন
তোমার আসনখানি, কোলাহল মাঝে
তোমার নিঃশব্দ সভা নিস্তব্ধে বিরাজে ।
সব দুঃখে , সব সুখে , সব ঘরে ঘরে ,
সব চিত্তে সব চিন্তা সব চেষ্টা- 'পরে
যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু যায় দেখা ,
হে সঙ্গবিহীন দেব ,  তুমি বসি একা ।।



                  স্তব্ধতা

আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে ।
জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে
শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার
স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি । ক্ষীণ নদীরেখা
নাহি করে গান আজি , নাহি  লেখে লেখা
বালুকার তটে । দূরে দূরে পল্লী যত
মুদ্রিত নয়নে রৌদ্র পোহাইতে রত ,
নিদ্রায় অলস, ক্লান্ত ।।
               এই স্তব্ধতায়
শুনিতেছি তৃণে তৃণে ধুলায় ধুলায় ,
 রোমে রোমে, লোকে লোকান্তরে
গ্রহে সূর্যে তারকায় নিত্যকাল ধ'রে
অনুপরমাণুদের নৃত্যকলরোল –
তোমার আসন ঘেরি অনন্ত কল্লোল ।।


                 সফলতা 

 মাঝে মাঝে  কতবার ভাবি, কর্মহীন
আজ  নষ্ট হল বেলা , নষ্ট হল দিন ।
নষ্ট হয় নাই, প্রভু , সে  সকল ক্ষণ –
আপনি তাদের তুমি করেছ গ্রহণ
ওগো অন্তর্যামী দেব ! অন্তরে অন্তরে
গোপনে প্রচ্ছন্ন রহি কোন অবসরে
বিজেরে অংকুর রূপে তুলেছ জাগায়ে,
মুকুলে প্রস্ফুট-বর্ণে দিয়েছ রাঙায়ে ।
ফুলেরে করেছ ফল রসে সুমধুর ,
বীজে পরিণত গর্ভ । আমি নিদ্রাতুর
আলস্য শয্যার 'পরে শ্রান্তিতে মরিয়া
ভেবেছিনু সর্বকর্ম রহিল পড়িয়া ।।

প্রভাতে জাগিয়া উঠি মেলিনু নয়ন ;
দেখিনু, ভরিয়া আছে  কানন ।।


                 প্রাণ 

 এ আমার শরীরের শিরায় শিরায়
যে প্রাণ তরঙ্গমালা  রাত্রিদিন ধায় 
সেই প্রাণ চুতিয়াছে বিশ্বদিগ্বিজয়ে ,
সেই প্রাণ অপরূপ ছন্দে তালে লয়ে
নাচিছে ভুবনে, সেই প্রাণ চুপে চুপে
বসুধার মৃত্তিকার প্রতি রোমকূপে
লক্ষ লক্ষ তৃণে তৃণে সঞ্চারে হরষে ,
বিকাশে পল্লবে পুষ্পে, বরষে বরষে
বিশ্বব্যাপী জন্মমৃত্যু-সমূদ্র-দোলায়
দুলিতেছে অন্তহীন জোয়ার-ভাঁটায় ।
করিতেছি অনুভব, সে অনন্ত প্রাণ
অঙ্গে অঙ্গে আমারে করেছে মহীয়ান ।।

সে যুগ যুগান্তরের বিরাট স্পন্দন
আমার নাড়ীতে আজি করিছে নর্তন ।।


                   দেহলীলা 

দেহে আর মনে প্রাণে হয়ে একাকার
একি অপরূপ লীলা এ অঙ্গে আমার ।।
একি জ্যোতি , একি ব্যোম দীপ্ত-দীপ -জ্বালা –
দিবা আর রজনীর শিরোনাট্যশালা ।
একি শ্যাম বসুন্ধরা – সমুদ্রে  চঞ্চল,
পর্বতে কঠিন, তরু-পল্লবে কোমল,
অরণ্যে আঁধার ! একি বিচিত্র বিশাল
অবিশ্রাম রচিতেছে সৃজনের জাল
আমার ইন্দ্রিয়যন্ত্রে ইন্দ্রজালবৎ !
প্রত্যেক প্রাণীর মাঝে অনন্ত জগৎ ।।

তোমারি মিলনশয্যা, হে মোর রাজন,
ক্ষুদ্র এ আমার মাঝে অনন্ত আসন
অসীম, বিচিত্র, ক্লান্ত । ওগো বিশ্বভূপ ,
দেহে মনে প্রাণে আমি একি অপরূপ ।।



                    মুক্তি 

বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয় ।।

অসংখ বন্ধনমাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ ! এই বসুধার
মৃত্তিকার পাত্রখানি ভরি বারম্বার
তোমার অমৃত ঢালি দিবে অবিরত
নানা বর্ণগন্ধময় । প্রদীপের মতো
 সংসার মোর লক্ষ বর্তিকায়
জ্বালায়ে তুলিবে আলো তোমারি শিখায়
তোমার মন্দির-মাঝে ।।

                              ইন্দ্রিয়ের দ্বার
রুদ্ধ করি যোগাসনে, সে নহে আমার ।
যে-কিছু আনন্দ আছে দৃশ্যে গন্ধে গানে
তোমার আনন্দ রবে তার মাঝখানে ।।

মোহ মোর মুক্তিরূপে উঠিবে জ্বলিয়া ,
প্রেম মোর ভক্তিরূপে রহিবে ফলিয়া ।।



               অজ্ঞাতে 

তখন করিনি নাথ,কোনো  আয়োজন ।
 বিশ্বের সবার সাথে,  হে বিশ্বরাজন ,
অজ্ঞাতে আসিতে হাসি আমার অন্তরে
কত শুভদিনে ; কত মুহূর্তের 'পরে
অসীমের চিহ্নে  লিখে গেছ ! লই তুলি
তোমার-স্বাক্ষর-আঁকা সেই ক্ষণগুলি –
দেখি তারা স্মৃতি-মাঝে আছিল ছড়ায়ে
কত-না ধুলির সাথে আছিল জড়ায়ে
ক্ষনিকের কত তুচ্ছ  সুখ দুঃখ ঘিরে ।।

হে নাথ , অবজ্ঞা করি যাও নাই ফিরে
আমার এ  ধুলাস্তুপ খেলাঘর দেখে
খেলা-মাঝে শুনিতে পেয়েছি থেকে থেকে
যে চরণধ্বনি, আজ শুনি তাই বাজে
জগৎ সংগীত সাথে চন্দ্রসূর্য - মাঝে ।


              অপরাহ্নে

প্রভাতে যখন শঙ্খ উঠেছিল বাজি
তোমার প্রাঙ্গণতলে, ভরি লয়ে সাজি
চলেছিল নরনারী তোয়াগিয়া ঘর
নবীন শিশিরসিক্ত গুঞ্জনমুখর
স্নিগ্ধ বনপথ দিয়ে । আমি অন্যমনে
সঘনপল্লবপুঞ্জ ছায়াকুঞ্জবনে
ছিনু শুয়ে তৃণাস্তীর্ণ তরঙ্গীনিতীরে
বিহঙ্গের কলগীতে , সুমন্দ সমীরে ।।

আমি যাই নাই দেব, তোমার পূজায় –
চেয়ে দেখি নাই পথে করা চলে যায় ।
আজি ভাবি, ভালো হয়েছিল  মোর ভুল –
তখন কুসুমগুলি আছিল মুকুল ।।

হিরো আজি সারাদিনে  ফুটিতেছে আজি ।
অপরাহ্নে ভরিলাম এ পূজার সাজি ।।


                প্রতীক্ষা 

হে রাজেন্দ্র, তব হাতে কাল অন্তহীন ।
গণনা কেহ না করে ; রাত্রি আর দিন
 আসে যায় , ফুটে ঝরে যুগযুগান্তরা ।
বিলম্ব নাহিক তব , নাহি তবে ত্বরা –
প্রতীক্ষা করিতে জানো । শতবর্ষ ধরে
একটি পুষ্পের কলি ফুটাবার তরে
চলে তব ধীর আয়োজন । কাল নাই
আমাদের হাতে ;  কাড়াকাড়ি করে তাই
সবে মিলি ;  কারো নাহি সহে কভু ।।

আগে তাই সকলের সব সেবা , প্রভু ,
শেষ করে দিতে দিতে কেটে যায় কাল ,
শূন্য পরে থাকে হায় তব পুজাথাল ।।

অসময়ে ছুটে আসি , মনে বাসি ভয় –
এসে দেখে যায় নাই তোমার সময় ।।



                অপ্রমত্ত 

যে ভক্তি তোমারে লয়ে  ধৈর্য নাহি মানে ,
মুহূর্তে বিহ্বল হয় নৃত্যগীতগানে
ভাবোন্মত্ততায়, সেই জ্ঞানহারা
উদভ্রান্ত উচ্চলফেন ভক্তিমদধারা
নাহি চাহি নাথ ।।

                        দাও ভক্তি , শান্তিরস ,
স্নিগ্ধ সুধা পূর্ণ করি মঙ্গলকলস
সংসার ভবনদ্বারে । যে ভক্তি-অমৃত
সমস্ত জীবনে মোর  বিস্তৃত
নিগূঢ় গভীর – সর্ব কর্মে বল,
ব্যর্থ শুভচেষ্টারেও করিবে সফল
আনন্দ কল্যাণে । সর্ব কর্মে দিবে তৃপ্তি ,
সর্ব দুঃখে দিবে ক্ষেম , সর্ব  দীপ্তি
দাহহীন ।।
             সম্বরিয়া ভাব-অশ্রুনীর
চিত্ত রবে পরিপূর্ণ, অমত্ত, গম্ভীর ।।



                  দীক্ষা 

আঘাতসংঘাত মাঝে দাঁড়াইনু আসি ।
অঙ্গদ কুন্ডল কন্ঠী  অলংকাররাশি
খুলিয়া ফেলেছি দূরে । দাও হস্তে তুলি
নিজ হাতে তোমার অমোঘ শরগুলি,
তোমার অক্ষয় তূণ অস্ত্র দীক্ষা
রণগুরু ! তোমার প্রবল পিতৃস্নেহ
ধ্বনিয়া উঠুক আজি কঠিন আদেশে ।।

করো মোরে সম্মানিত নববীরবেশে ,
দুরূহ কর্তব্যভারে, দুঃসহ কঠোর
বেদনায় ! পরাইয়া দাও অঙ্গে মোর
ক্ষতচিহ্ন অলংকার । ধন্য করো দাসে
সফল চেষ্টায় আর নিষ্ফল প্রয়াসে ।
ভাবের ললিত ক্রোড়ে না রাখি নিলীন
কর্মক্ষেত্রে করে দাও সক্ষম স্বাধীন ।।



                   ত্রাণ 

এ দুর্ভাগ্য দেশ হতে , হে মঙ্গলময় ,
দূর করে দাও তুমি সর্ব তুচ্ছ ভয় –
লোকভয় , রাজভয়, মৃত্যুভয় আর ।
দীনপ্রান দুর্বলের এ পাষাণভার ,
এই চিরপেষণযন্ত্রনা , ধূলিতলে
এই নিত্য অবনতি , দন্ডে পলে পলে
এই আত্ম অবমান , অন্তরে বাহিরে
এই দাসত্বের রজ্জু , ত্রস্ত নতশিরে
সহস্রের পদপ্রান্ততলে বারম্বার
মনুষ্যমর্যাদাগর্ব চিরপরিহার –
এ বৃহৎ লজ্জারাশি চরণ-আঘাতে
চূর্ণ করি দূর করো । প্রভাতে
মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে
উদার আলোক মাঝে, উন্মুক্ত বাতাসে ।।



                ন্যায়দন্ড

তোমার ন্যায়ের দণ্ড প্রত্যেকের করে
অর্পণ করেছো নিজে, প্রত্যেকের 'পরে
দিয়েছ শাসনভার হে রাজাধিরাজ !
সে গুরু সন্মান তব, সে দুরূহ কাজ
নমিয়া তোমারে যেন শিরোধার্য করি
সবিনয়ে ; তব কার্যে যেন নাহি ডরি
কভু কারে ।।

               ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা ,
হে রুদ্র , নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা
তোমার আদেশে । যেন রসনায় মম
সত্যবাক্য ঝলি উঠে খড়খড়্গ সম
তোমার ইঙ্গিতে । জন রাখি তব মান
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান ।।

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে ।।



                 প্রার্থনা 


চিত্ত যেথা ভয়শূন্য , উচ্চ্ যেথা শির
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি ,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে , যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায় ,
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতপথ  গ্রাসি –
পৌরুষেরে করেনি শতধা , নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা ,
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত ।।



             নীড় ও আকাশ 

একাধারে তুমিই আকাশ, তুমি নীড় ।
হে সুন্দর , নীড় তব প্রেম সুনিবিড়
প্রতি ক্ষণে নানা বর্ণে, নানা গন্ধে গীতে,
মুগ্ধ প্রাণ বেষ্টন করেছে চারি ভিতে ।
সেথা উষা ডান হাতে ধরি স্বর্ণথালা
নিয়ে আসে এক খানি মাধুর্যের মালা
নীরবে পরায়ে দিতে ধরার ললাটে;
সন্ধ্যা আসে নম্রমুখে ধেনুশূন্য মাঠে
চিহ্নহীন পথ দিয়ে লয়ে স্বর্ণঝারি
পশ্চিমসমুদ্র হতে ভরি শান্তিবারি ।।

তুমি যেথা আমাদের আত্মার আকাশ
অপার সঞ্চারক্ষেত্র – সেথা শুভ্র ভাস –
দিন নাই রাত্রি নাই , নাই জনপ্রাণী ,
বর্ণ নাই, গন্ধ নাই, নাই নাই বাণী ।।



                  জন্ম 


জীবনের সিংহদ্বারে পশিনু যে ক্ষনে
এ আশ্চর্য সংসারের মহানিকেতনে
সে ক্ষণ অজ্ঞাত মোর । কোন শক্তি মোরে
ফুটাইল এ বিপুল রহস্যের ক্রোড়ে
অর্ধরাত্রে মহারণ্যে মুকুলের মতো ।।

তবু তো প্রভাতে শির করিয়া উন্নত
যখনি নয়ন মেলি নিরাখিনু ধরা
কনককিরণ-গাঁথা নীলাম্বর-পরা,
নিরখিনু সুখে দুঃখে খচিত সংসার –
তখনি অজ্ঞাত এই রহস্য অপার
নিমেষেই মনে হল মাতৃবক্ষ সম ।।

রূপহীন জ্ঞানাতীত ভীষণ শকতি
ধরেছে  আমার কাছে জননীমুরতি ।।

               


                    মৃত্যু 

মৃত্যুও অজ্ঞাত মোর ।  আজি তার তরে
ক্ষনে ক্ষনে শিহরিয়া কাঁপিতেছি ডরে ।
সংসারে বিদায় দিতে , আঁখি ছলছলি
জীবন আঁকড়ি ধরি আপনার বলি
দুই ভুজে ।।

            ওরে মূঢ়, জীবন সংসার
কে করিয়া রেখেছিল এতো আপনার
জনমমুহূর্ত হতে তোমার অজ্ঞাতে,
তোমার ইচ্ছার পূর্বে ! মৃত্যুর প্রভাতে
সেই অচেনার মুখ হেরিবি আবার
মুহূর্তে চেনার মতো । জীবন আমার
এতো ভালোবাসি বলে হয়েছে প্রত্যয় ,
মৃত্যুরে এমনি ভালো বাসিব নিশ্চয় ।।

স্তন হতে তুলে নিলে কাঁদে শিশু ডরে ,
মুহূর্তে আশ্বাস পায় গিয়ে স্তনান্তরে ।।


                নিবেদন 

তবে কাছে এই মোর শেষ নিবেদন
সকল ক্ষীণতা মম করহ ছেদন
দৃঢ়বলে, অন্তরের অন্তর হইতে
প্রভু মোর ! বীর্য দেহো সুখের সহিতে
সুখেরে কঠিন করি । বীর্য দেহ দুঃখে ,
যাহে দুঃখ আপনারে শান্তস্মিতমুখে
পারে উপেক্ষিত । ভকতিরে বীর্য দেহো
কর্মে যাহে হয় সে সফল, প্রীতি স্নেহ
পুণ্যে উঠি ফুটি । বীর্য দেহো ক্ষুদ্র জনে
না করিতে হীনজ্ঞান, বলের চরণে
না লুটিতে । বীর্য দেহো চিত্তেরে একাকী
প্রত্যহের তুচ্ছতার উর্ধে দিতে রাখি ।।

বীর্য দেহো তোমার চরণে রাহি শির
অহর্নিশি আপনারে রাখিবারে স্থির ।।
















Manasi by Rabindranath Tagore - মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

                        ভুলে

কে আমারে জেনো এনেছে ডাকিয়া, এসেছি ভুলে ।
তবু একবার চাও মুখপানে নয়ন তুলে ।
         দেখি, ও নয়নে নিমেষের তরে
         সেদিনের ছায়া পরে কি না পড়ে ,
সজল আবেগে আঁখিপাতা দুটি পড়ে কি ঢুলে ।
ক্ষনিকের তরে ভুল ভাঙ্গায়ো না , এসেছে ভুলে ।।

বেলকুঁড়ি দুটি করে ফুটি ফুটি অধর খোলা ।
মনে পরে গেলো সেকালের সেই কুসুম তোলা ।
         সেই শুকতারা সেই চোখে চায় ,
         বাতাস কাহারে খুঁজিয়া বেড়ায়,
উষা না ফুটিতে হাসি ফুটে তার গগনমূলে ।
সেদিন যে গেছে ভুলে গেছি , তাই এসেছি ভুলে ।।

ব্যাথা দিয়ে কবে কথা কোয়েছিলে পরে না মনে ।
দূরে থেকে কবে ফিরে গিয়েছিলে নাই স্মরণে ।
           শুধু মনে পড়ে হাসিমুখখানি ,
           লাজে-বাধো -বাধো সোহাগের বাণী,
মনে পড়ে সেই হৃদয় -উছাস নয়নকূলে ।
তুমি যে ভুলেছ ভুলে গেছি, তাই এসেছি ভুলে ।।

কাননের ফুল ের তো ভোলে নি , আমরা ভুলি -
সেই তো ফুটেছে পাতায় পাতায় কামিনীগুলি ।
           চাঁপা কথা হতে এনেছে ধরিয়া
           অরুণকিরণ কোমল করিয়া -
বকুল ঝরিয়া মরিবারে চায় কাহার চুলে !
কেহ ভোলে কেহ ভোলে না যে, তাই এসেছি ভুলে ।।

এমন করিয়া কেমনে কাটিবে মাধবী রাতি !
দখিনে বাতাসে কেহ নাই পাশে সাথে সাথি ।
           চারি দিক হতে বাঁশি শোনা যায় ,
           সুখে আছে যারা তারা গান গায় -
আকুল বাতাসে , মদির সুবাসে , বিকচ ফুলে ।
এখনো কি কেঁদে চাহিবে না কেউ, আসিলে ভুলে ?।


বৈশাখ ১২৯৪



                   ভুল ভাঙা 


বুঝেছি আমার নিশার স্বপন হয়েছে ভোর।
মালা ছিল তার ফুলগুলি গেছে , রয়েছে ডোর।
নেই আর সেই চুপি চুপি চাওয়া ,
ধীরে কাছে এসে ফিরে ফিরে যাওয়া -
চেয়ে আছে আঁখি , নাই ও আঁখিতে প্রেম ঘোর ।
বাহুলতা শুধু বন্ধনপাশ বাহুতে মোর ।।

হাসিটুকু আর পড়ে না তো ধরা অধরকোণে ।
আপনারে আর চাহ না লুকাতে আপনমনে ।
স্বর শুনে আর উতলা হৃদয়
উথলি উঠে না সারা দেহময় ,
গান শুনে আর ভাসে না নয়নে নয়নলোর  ।
আঁখিজলরেখা ঢাকিতে চাহে না শরমচোর ।।

বসন্ত নাহি এ ধরায় আর আগের মতো ,
জ্যোৎস্নাযামিনী যৌবনহারা জীবনহত ।
আর বুঝি কেহ বজায় না বীণা
কে জানে কাননে ফুল ফোটে কি না -
কে জানে সে ফুল তোলে কিনা কেউ ভরি আঁচোর ।
কে জানে সে ফুলে মালা গাঁথে কিনা সারা প্রহর ।।

বাঁশি বেজেছিল , ধরা দিনু যেই থামিল বাঁশি  ।
এখন কেবল চরণে শিকল কঠিন ফাঁসি ।
মধুনিশা গেছে , স্মৃতি তারি আজ
মর্মে মর্মে হানিতেছে লাজ -
সুখ গেছে, শুধু আছে প্রাণপণ মিছে আদর ।।

কতই না জানি জেগেছে রজনী করুণ দুঃখে ,
সদয় নয়নে চেয়েছ আমার মলিন মুখে ।
পরদুঃখভার সহে নাক আর ,
লতায়ে পড়িছে দেহ সুকুমার -
তবু আসি আমি , পাষান হৃদয় বড়ো কঠোর ।
ঘুমাও ঘুমাও - আঁখি ঢুলে আসে ঘুমে কাতর  ।


কলিকাতা
বৈশাখ , ১২৯৪


               বিরহানন্দ

ছিলাম নিশিদিন আশাহীন প্রবাসী
বিরহতপোবনে আনমনে উদাসী ।
আঁধারে আলো মিশে দিশে দিশে খেলিত ,
অটবী বায়ুবশে উঠিত সে উছাসি ।
কখনো ফুল-দুটো আঁখিপুট মেলিত ,
কখনো পাতা ঝ'রে পড়িত রে নিশাসি  ।।

তবু সে ছিনু  ভালো আধা-আলো আঁধারে ,
গহন শত-ফের বিষাদের মাঝারে।
নয়নে কত ছায়া কত মায়া ভাসিত ,
উদাস বায়ু সে তো ডেকে যেত আমারে।
ভাবনা কত সাজে হৃদিমাঝে অসিত,
খেলাত অবিরত কত শত আকারে ।।

বিরহপরিপূত ছায়াযুত শয়নে
ঘুমের সাথে স্মৃতি আসে নিতি নয়নে।
কপোত-দুটি ডাকে বসি শাখে মধুরে,
দিবস চলে যায় গলে যায় গগনে।
কোকিল কুহুতানে ডেকে আনে বধূরে ,
নিবিড় শীতলতা তরুলতা - গহনে ।।

আকাশে চাহিতাম, গাহিতাম একাকী -
মনের যত কথা ছিল সেথা লেখা কি !
দিবস নিশি ধ'রে ধ্যান ক'রে তাহারে
নীলিমা-পরপার পাবো তার দেখা কি !
তটিনী অনুখন ছোটে কোন পাথারে ,
আমি যে গান গাই তারি ঠাঁই শেখা কি ?।

বিরহে তারি নাম শুনিতাম পবনে ,
তাহারি সাথে থাকা মেঘে ঢাকা ভবনে ।
পাতার মরমর কলেবর হরষে ,
তাহারি পদধ্বনি যেন গণি কাননে ।
মুকুল সুকুমার যেন তার পরশে ,
চাঁদের চোখে ক্ষুধা তারি সুধা স্বপনে ।।

সারাটা দিনমান রচি গান কত-না ,
তাহারি পাশে রহি যেন কহি বেদনা
কানন মরমরে কত স্বরে কহিত ,
ধ্বনিত যেন দিশে তাহারি সে রচনা ।
সতত দূরে কাছে আগে পাছে বহিত
তাহারি যত কথা পাতা লতা ঝরনা ।।

তাহারে আঁকিতাম, রাখিতাম ধরিয়া
বিরহছায়াতল সুশীতল করিয়া ।
কখনো দেখি যেন ম্লান-হেন মুখানি ,
কখনো আঁখিপুটে হাঁসি উঠে ভরিয়া ।
কখনো সারারাত ধরি হাত - দুখানি
রহি গো বেশবাসে কেশপাশে মরিয়া ।।

বিরহ সুমধুর হল দূর কেন রে !
মিলন দাবানলে গেলো জ্বলে যেন রে ।
কই সে দেবী কই ! হেরো ওই একাকার ,
শ্মশানবিলাসিনী বিবাসিনী বিহরে ।
নাই গো দয়ামায়া স্নেহছায়া নাহি আর ।
সকলই করে ধুধু, প্রাণ শুধু শিহরে ।।

[জ্যৈষ্ঠ, ১২৯৪]



                    সিন্ধুতরঙ্গ 

পুরীতীর্থযাত্রী তরুণীর নিমজ্জন উপলক্ষে


দোলে রে প্রলয় দোলে               অকুল সমুদ্র কোলে
                           উৎসব ভীষণ ।
শত পক্ষ ঝাপটিয়া                 বেড়াইছে দাপটিয়া
                         দুর্দম পবন ।
আকাশ সমুদ্র সাথে                প্রচন্ড মিলন মাতে
      নিখিলের আঁখিপাতে আবরি তিমির ।
বিদ্যুৎ চমকি ত্রাসি ,                হা হা করে ফেনরাশি ,
            তীক্ষ্ণ শ্বেত রুদ্র হাসি জড়প্রকৃতির ।
চক্ষুহীন কর্ণহীন                     গেহহীন স্নেহহীন
                          মত্ত দৈত্যগণ
মরিতে ছুটেছে কোথা ,             ছিড়েছে বন্ধন ।।

হারাইয়া চারি ধার                     নীলাম্বুধি অন্ধকার
                       কল্লোলে ক্রন্দনে
রোষে ত্রাসে উর্দ্ধশ্বাসে                 অট্টরোল অট্টহাসে
                          উন্মাদগর্জনে
ফাটিয়া ফুটিয়ে উঠে ,                 চূর্ণ হয় যায় টুটে ,
            খুঁজিয়া মরিছে ছুটে আপনার কূল –
যেন রে পৃথিবী ফেলি                 বাসুকি করিছে কেলি
           সহস্রৈক ফণা মেলি আচারি লাঙ্গুল ।
যেন রে তরল নিশি                   টলমল দশ দিশি
                         উঠেছে নড়িয়া ,
        আপন নিদ্রার জাল ফেলেছে ছিঁড়িয়া ।।
নাই সুর , নাই ছন্দ                     অর্থহীন নিরানন্দ
                          জড়ের নর্তন ।
সহস্র জীবন বেঁচে                      ওই কি উঠেছে নেচে
                          প্রকান্ড মরণ !
জল বাষ্প বজ্র বায়ু                    লভিয়াছে অন্ধ আয়ু,
             নূতন জীবনস্নায়ূ টানিছে হতাশে –
দিগ্বিদিক নাহি জানে ,                বাধা বিঘ্ন নাহি মানে ,
           ছুটেছে প্রলয় পানে আপনারি ত্রাসে ।
হেরো , মাঝখানে তারি                আটশত নরনারী
                            বাহু বাঁধি বুকে
         প্রাণে আঁকড়িয়া প্রাণ চাহিয়া সম্মুখে ।।

তরণী ধরিয়া ঝাঁকে                    রাক্ষসী ঝটিকা হাঁকে
                        'দাও দাও দাও' ।
সিন্ধু ফেনোচ্ছলছলে                 কোটি উর্ধকর বলে
                         'দাও দাও দাও' ।
বিলম্ব দেখিয়া রোষে                  ফেনায়ে ফেনায়ে ফোঁসে ,
          নীল মৃত্যু মহাক্রোশে শ্বেত হয়ে উঠে ।
ক্ষুদ্র তরী গুরু ভার                   সহিতে পারে না আর
             লৌহবক্ষ ওই তার যায় বুঝি টুটে ।
অধ ঊর্ধ্ব এক হয়ে                     ক্ষুদ্র এ খেলনা লয়ে
                       খেলিবারে চায় ।
          দাঁড়াইয়া কর্ণধার তরীর মাথায় ।।

নরনারী কম্পমান                     ডাকিতেছে ভগবান ,
                            হায় ভগবান
'দয়া করো, দয়া করো '               উঠিছে কাতর স্বর ,
                        'রাখো রাখো প্রাণ '
কথা সেই পুরাতন                      রবি শশী তারাগণ ,
             কথা আপনার ধন ধরণীর কোল !
আজন্মের স্নেহসার                    কথা সেই ঘরদ্বার –
         পিশাচী এ বিমাতার হিংস্র উতরোল !
যে দিকে ফিরিয়া চাই                  পরিচিত কিছু নাই ,
                            নাই আপনার –
              সহস্র করাল মুখ সহস্র আকার ।।

ফেটেছে ধরণীতল                      সবেগে উঠিছে জল ,
                        সিন্ধু মেলে গ্রাস ।
নাই তুমি ভগবান,                      নাই দয়া নাই প্রাণ –
                        জড়ের বিলাস ।
ভয় দেখে ভয় পায় ,                    শিশু কাঁদে উভরায়
          নিদারুণ 'হায় হায়' থামিল চকিতে ।
নিমেষেই ফুরাইল –                    কখন জীবন ছিল
           কখন জীবন গেল নারিল লখিতে ।
যেন রে একই ঝরে                     নিভে গেল একত্তরে
                      শত দীপ-আলো –
          চকিতে সহস্র গৃহে আনন্দ ফুরালো ।।
প্রাণহীন এ মত্ততা                      না জানে পরের ব্যাথা
                      না জানে আপন ।
এর মাঝে কেন রয়                     ব্যাথাভরা স্নেহময়
                           মানবের মন !
মা কেন রে এইখানে ,                  শিশু চায় তার পানে ,
       ভাই সে ভায়ের টানে কেন কেন পড়ে বুকে -
মধুর রবির করে                         কত ভালোবাসা-ভরে
            কতদিন খেলা করে কত সুখে দুখে ।
কেন করে টলমল                      দুটি ছোট অশ্রুজল,
                         সকরুণ আশা !
         দীপশিখাসম কাঁপে ভীত ভালোবাসা ।।
এমন জড়ের কোলে                 কেমনে নির্ভয়ে দোলে
                        নিখিলমানব !
সব সুখ সব আশ                   কেন নাহি করে গ্রাস
                         মরণদানব !
ওই-যে জন্মের তরে                   জননী ঝাঁপিয়ে পড়ে ,
        কেন বাঁধে বক্ষোপরে সন্তান আপন !
মরণের মুখে ধায়                     সেথাও দিবে না তায় ,
            করিয়া রাখিতে চায় হৃদয়ের ধন ।
আকাশেতে পারাবারে              দাঁড়ায়েছে এক ধারে ,
                          এক ধারে নারী -
           দুর্বল শিশুটি তার  কে লইবে কাড়ি ।।

এ বল কোথায় পেলে –             আপন কোলের ছেলে
                       এত করে টানে !
এ নিষ্ঠুর জড়স্রোতে                  প্রেম এল কোথা হতে
                        মানবের প্রাণে !
নৈরাশ্য কভু না জানে ,             বিপত্তি কিছু না মানে
          অপূর্ব অমৃত পানে অনন্ত নবীন –
এমন মায়ের প্রাণ                      যে বিশ্বের কোনোখান
       তিলেক পেয়েছে স্থান , সে কি মাতৃহীন ?
এ প্রলয়-মাঝখানে                    অবলা জননী-প্রাণে
                        স্নেহ মৃত্যুজয়ী -
           এ স্নেহ  রাখে কোন স্নেহময়ী ?।
পাশাপাশি এক ঠাঁই                   দয়া আছে, দয়া নাই –
                         বিষম সংশয় ।
মহাশংকা মহা-আশা                 একত্র বেঁধেছে বাসা,
                         এক সাথে রয় ।
কেবা সত্য কেবা মিছে                 নিশিদিন আকুলিছে –
               কভু উর্ধে কভু নিচে টানিছে হৃদয় ।
জড়দৈত্য শক্তি হানে,                 মিনতি নাহিকো মানে –
           প্রেম এসে কোলে টানে, দূর করে ভয় ।
এ কি দুই দেবতার                      দ্যূত খেলা অনিবার
                          ভাঙাগড়াময় –
            চিরদিন অন্তহীন জয় পরাজয় ?।




নিষ্ফল কামনা

রবি অস্ত যায় ।
অরণ্যেতে অন্ধকার আকাশেতে আলো
সন্ধ্যা নত -আঁখি
ধীরে আসে দিবার পশ্চাতে ।
বহে কি না বহে
বিদায়বিষাদশ্রান্ত সন্ধ্যার বাতাস ।
দুটি হাতে হাত দিয়ে ক্ষুধার্ত নয়নে
চেয়ে আছি দুটি-আঁখি-মাঝে ।।

খুঁজিতেছি কোথা তুমি !
যে অমৃত লুকানো তোমায়
সে কোথায় !
অন্ধকার সন্ধ্যার আকাশে
বিজন তারার মাঝে কাঁপিছে যেমন
স্বর্গের আলোকময় রহস্য অসীম ,
ওই নয়নের
নিবিড়তিমিরতলে কাঁপিছে তেমনি
আত্মার রহস্যশিখা ।
তাই চেয়ে আছি ।
প্রাণ মন সব লয়ে তাই ডুবিতেছি
অতল আকাঙ্খাপারাবারে ।
তোমার আঁখির মাঝে,
হাসির আড়ালে ,
বচনের সুধাস্রোতে ,
তোমার বদনব্যাপী
করুণশান্তির তলে
তোমারে কোথায় পাব -
তাই এ ক্রন্দন ।।

বৃথা এ ক্রন্দন ।
হায় রে দুরাশা -
এ রহস্য, এ আনন্দ তোর তরে নয় ।
যাহা পাস তাই ভালো -
হাসিটুকু , কথাটুকু ,
নয়নের দৃষ্টিটুকু, প্রেমের আভাস ।
সমগ্র মানব তুই পেতে চাস ,
এ কী  দুঃসাহস !
কি আছে বা তোর !
কী পারিবি দিতে !
আছে কি অনন্ত প্রেম ?
পারিবি মিটাতে
জীবনের অনন্ত অভাব ?
মহাকাশ - ভরা
এ অসীম জগৎ-জনতা,
এ নিবিড় আলো-অন্ধকার ,
কোটি ছায়াপথ , মায়াপথ ,
দুর্গম উদয় -অস্তাচল –
এরই মাঝে পথ করি
পারিবি কি নিয়ে যেতে
চিরসহচরে
চিররাত্রিদিন
একা অসহায় ?
যে জন আপনি ভীত , কাতর দুর্বল ,
ম্লান, ক্ষুধাতৃষাতুর, অন্ধ, দিশাহারা ,
আপন হৃদয়ভারে পীড়িত জর্জর ,
সে কাহারে পেতে চায় চিরদিন-তরে !

ক্ষুধা মিটাবার খাদ্য নহে যে মানব ,
কেহ নহে তোমার আমার ।
অতি সযতনে
অতি সংগোপনে ,
সুখে দুঃখে, নিশীথে দিবসে
বিপদে সম্পদে
জীবনে মরণে ,
শত ঋতু আবর্তনে
শতদল উঠিতেছে ফুটি -
সুতীক্ষ্ন বাসনা-ছুরি দিয়ে
তুমি তাহা চাও ছিঁড়ে নিতে ?
লও তার মধুর সৌরভ ,
দেখো তার সৌন্দর্যবিকাশ ,
মধু তার কারো তুমি পান ,
ভালোবাসো , প্রেমে হও বলী -
চেয়ো না তাহারে ।
আকাঙ্খার ধন নহে আত্মা মানবের ।।

শান্ত সন্ধ্যা , স্তব্ধ কোলাহল ।
নিবাও বাসনাবহ্নি নয়নের নীরে ।
চলো ধীরে ঘরে ফিরে যাই ।।


১৩ অগ্রহায়ণ ১২৯৪


             নারীর উক্তি

            মিছে তর্ক – থাক তবে থাক,
            কেন কাঁদি বুঝিতে পার না ?
তর্কেতে বুঝিবে তা কি ?          এই মুছিলাম আঁখি ,
      এ শুধু চোখের জল , এ নহে ভর্ৎসনা ।।

            আমি কি চেয়েছি পায়ে ধরে
            ওই তব আঁখি তুলে চাওয়া ,
ওই কথা , ওই হাঁসি                ওই কাছে আসা-আসি,
          অলক দুলায়ে দিয়ে হেসে চলে যাওয়া ?।

         কেন আন বসন্ত নিশীথে
                আঁখিভরা আবেশ বিহ্ব্ল
যদি বসন্তের শেষে       শ্রান্তমনে ম্লান হেসে
         কাতরে খুঁজিতে হয় বিদায়ের ছল ?।
              আছি যেন সোনার খাঁচায়
                     একখানি পোষ মানা প্রাণ ।

এও কি বুঝাতে হয় –                প্রেম যদি নাহি রয়
       হাসিয়ে সোহাগ করা শুধু অপমান ।।

         মনে আছে, সেই একদিন
             প্রথম প্রণয় সে তখন ।

বিমল শরৎকাল,                     শুভ্র ক্ষীণ মেঘজাল,
      মৃদু শীতবায়ে স্নিগ্ধ রবির কিরণ ।।

         কাননে ফুটিত শেফালিকা,
                  ফুলে ছেয়ে যেত তরুমূল –
পরিপূর্ণ সুরধুনী,                      কুলুকুলু ধ্বনি শুনি –
       পরপারে বনশ্রেণী কুয়াশা-আকুল ।।

         আমা-পানে চাহিয়ে তোমার
                 আঁখিতে কাঁপিত প্রাণখানি ।
আনন্দে-বিষাদে মেশা              সেই নয়নের নেশা
  তুমি তো জানো না তাহা,   আমি তাহা জানি ।।

         সে কি মনে পড়িবে তোমার –
                 সহস্র লোকের মাঝখানে
যেমনি দেখিতে মোরে                  কোন আকর্ষণ-ডোরে
        আপনি আসিতে কাছে জ্ঞানে কি অজ্ঞানে ।।

          ক্ষণিক বিরহ-অবসানে
               নিবিড় মিলনব্যাকুলতা –
মাঝে মাঝে সব ফেলি                 রহিতে  নয়ন মেলি,
           আঁখিতে শুনিতে যেন হৃদয়ের কথা ।।
              কোনো কথা না রহিলে তবু
                      শুধাইতে নিকটে আসিয়া ।
 নীরবে চরণ ফেলে                    চুপি চুপি কাছে এলে
         কেমনে জানিতে পেতে, ফিরিতে হাসিয়া ।।

             আজ তুমি দেখেও দেখ না
             সব কথা শুনিতে না পাও ।
কাছে আস আশা ক'রে                 আছি সারা দিন ধরে ,
          আনমনে পাশ দিয়ে তুমি চলে যাও ।।

              দীপ জ্বেলে দীর্ঘ ছায়া লয়ে
                     বসে আছি সন্ধ্যায় ক'জনা ,
হয়তো বা কাছে এস ,                   হয়তো বা দূরে বস,
             সে-সকলই ইচ্ছাহীন দৈবের ঘটনা ।।

               এখন হয়েছে বহু কাজ ,
               সতত রয়েছে অন্যমনে ।
সর্বত্র ছিলাম আমি,                    এখন এসেছি নামি –
            হৃদয়ের প্রান্তদেশে , ক্ষুদ্র গৃহকোণে ।।

              দিয়েছিলে হৃদয় যখন
              পেয়েছিলে প্রাণমন দেহ ।
আজ সে হৃদয় নাই ,                   যতই সোহাগ পাই
          শুধু তাই অবিশ্বাস বিষাদ সন্দেহ ।।

              জীবনের বসন্ত যাহারে
              ভালোবেসেছিলে একদিন ,
হায় হায় কি কুগ্রহ,                   আজ তারে অনুগ্রহ !
          মিষ্ট কথা দিবে তারে গুটিদুই-তিন ।।

              অপবিত্র ও করপরশ
              সঙ্গে ওর হৃদয় নহিলে ।
মনে কি করেছ,                      বঁধু, ও হাসি এতই মধু
           প্রেম না দিলেও চলে শুধু হাসি দিলে ?

          তুমিই তো দেখলে আমায়
          (স্বপ্নেও ছিল না এতো আশা )
প্রেম দেয় কতখানি –               কোন হাসি, কোন বাণী ,
         হৃদয় বাসিতে পারে কত ভালোবাসা ।।

          তোমারি সে ভালোবাসা দিয়ে
          বুঝেছি আজি এ ভালোবাসা –
আজি এই দৃষ্টি হাসি,               এ আদর রাশি রাশি ,
        এই দূরে চলে যাওয়া , এই কাছে আসা ।।

         বুক ফেটে কেন অশ্রু পড়ে
                 তবুও কি বুঝিতে পারো না ?
তর্কেতে বুঝিবে তা কি ?           এই মুছিলাম আঁখি –
       এ শুধু চিখের জল , এ নহে ভর্ৎসনা ।।

২১ অগ্রহায়ণ, ১২৯৪





পুরুষের উক্তি
বধূ
ব্যক্ত প্রেম

গুপ্ত প্রেম

অপেক্ষা

সুরদাসের প্ৰাৰ্থনা

ভৈরবী


      বর্ষার  দিনে (Borshaar Dine)
                In a rainy day

          এমন দিনে তারে বলা যায়
          এমন ঘনঘোর বারিষায় -
এমন মেঘস্বরে                     বাদল-ঝরঝরে
          তপনহীন ঘন তমসায়  ।।

          সে কথা শুনিবে না কেহ আর
          নিভৃত নির্জন ক্যারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি                গভীর দুখে দুখী ,
          আকাশে জল ঝরে অনিবার -
          জগতে কেহ যেন নাহি আর  ।।

          সমাজ সংসার মিছে সব
          মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে              আঁখির সুধা পিয়ে
           হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব -
           আঁধারে মিশে গেছে আর সব  ।।

           বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান,
           চমকি উঠিবে না  নিজ প্রাণ ।
সেকথা আঁখিনীরে           মিশিয়ে যাবে ধীরে ধীরে
           বদলবায়ে তার অবসান -
           সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ ।।
       
           তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
           নামাতে পারি যদি মনোভার !
শ্রাবণবরিষনে                  একদা গৃহকোণে
          দুকথা বলি যদি কাছে তার
          তাহাতে আসে যাবে কিবা কার ।।

          আছে তো তার পরে বারো মাস -
          উঠিবে কত কথা, কত হাস।
আসিবে কত লোক,          কত-না দুঃখশোক ,
          সেকথা কোনখানে পাবে নাশ -
          জগৎ চলে যাবে বারো মাস ।।

          ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায় ,
          বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে            রহিয়া গেল মনে
         সে কথা আজি যেন বলা যায়
          এমন ঘনঘোর বরিষায় ।।


রোজ ব্যাঙ্ক    ।  খিরকি
৩ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৬


                     অনন্ত প্রেম

তোমারেই যেন ভালো বসিয়াছি শতরূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার
চিরকাল ধরে হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার -
কতরূপ ধরে পড়েছি গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার ।।

যত শুনি সেই অতীত কাহিনী , প্রাচীন প্রেমের ব্যাথা ,
অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা ,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে ।।

আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয় উৎস হতে ।
বিরহ মধুর নয়নসলিলে , মিলন মধুর লাজে -
পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে ।।

আজি সে চির দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে ,
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে ।
নিখিলের সুখ , নিখিলের দুঃখ , নিখিল প্রাণের প্রীতি ,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল স্মৃতি -
সকল কালের সকল কবির গীতি ।।

জোড়াসাঁকো , কলিকাতা
২ ভাদ্র , ১২৯৬


ক্ষণিক মিলন

একদা এলোচুলে কোন ভুলে ভুলিয়া
আসিল সে আমার ভাঙা দ্বার খুলিয়া ।
জ্যোৎস্না অনিমিখ , চারিধার সুবিজন –
চাহিল একবার আঁখি তার তুলিয়া ।
দখিন বায়ু - ভরে থরথরে কাঁপে বন ,
উঠিল প্রাণ মম তারই সম দুলিয়া ।।

আবার ধীরে ধীরে গেল ফিরে আলসে ,
আমার সব হিয়া মাড়াইয়া গেল সে ।
আমার যাহা ছিল সব নিল আপনায় ,
হরিল আমাদের আকাশের আলো সে ।
সহসা এ জগৎ ছায়াবৎ হয়ে যায়
তাহারি চরণের শরণের লালসে ।।

যে জন চলিয়াছে তারই পাছে সব ধায় ,
নিখিলে যত প্রাণ যত গান ঘিরে তায় ।
সকল রূপহার উপহার চরণে –
ধায় গো উদাসিয়া যত হিয়া পায় পায় ।
যে জন পরে থাকে একা ডাকে মরণে –
সুদূর হতে হাসি আর বাঁশি শোনা যায় ।।

[জোড়াসাঁকো, কলিকাতা
৯ ভাদ্র ১২]


                    ভাল করে বলে যাও

                               ওগো , ভালো করে বলে যাও ।
           বাঁশরী বাজায়ে যে কথা জানাতে সে কথা বুঝায়ে দাও ।
যদি     না বলিবে কিছু তবে কেন এসে মুখপানে শুধু চাও ।।

                              আজি অন্ধতামসী নিশি ।
           মেঘের আড়ালে গগনের তারা সবগুলি গেছে মিশি ।
শুধু     বাদলের বায় করি হায় -হায় আকুলিছে দশ দিশি ।।

                              আমি কুন্তল দিব খুলে ।
           অঞ্চলমাঝে ঢাকিব তোমায় নিশীথনিবিড় চুলে ।
দুটি      বাহুপাশে বাঁধি নত মুখখানি বক্ষে লইব তুলে ।।

                             সেথা নিভৃতনিলয় সুখে
          আপনার মনে বলে যেয়ো কথা মিলনমুদিত বুকে ।
আমি   নয়ন মুদিয়া শুনিব কেবল, চাহিব না মুখে মুখে ।।

                            যবে ফুরাবে তোমার কথা
          যে যেমন আছি রহিব বসিয়া চিত্র পুতলি যথা
শুধু    শিয়রে দাঁড়ায়ে করে কানাকানি মর্মর তরুলতা ।।

                          শেষে রজনীর অবসানে
           অরুণ উদিলে ক্ষনেকের তরে চাব দুঁহু দোহা-পানে ।
ধীরে    ঘরে যাব ফিরে দোঁহে দুই পথে জলভরা দুনয়ানে ।।

                          তবে ভালো করে বলে যাও ।
         আঁখিতে বাঁশিতে যে কথা ভাষিতে সে কথা বুঝায়ে দাও ।
শুধু    কম্পিত সুরে আধো ভাষা পুরে কেন এসে গান গাও ।।


 [শান্তিনিকেতন, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭ ]

               

                মেঘদূত

কবিবর , কবে কোন বিস্মৃত বরষে
কোন পুন্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে
লিখেছিলে মেঘদূত ! মেঘমন্দ্র শ্লোক
বিশ্বের বিরহী যত সকলের শোক
রাখিয়াছে আপন আধার স্তরে স্তরে
সঘনসংগীতমাঝে পুঞ্জীভূত করে ।।

সেদিন সে উজ্জয়িনীপ্রাসাদশিখরে
কী  না জানি ঘনঘটা , বিদ্যুৎ-উৎসব ,
উদ্দাম পবনবেগ , গুরুগুরু রব !
গম্ভীর নির্ঘোষ সেই মেঘসংঘর্ষের
জাগায়ে তুলিয়াছিল সহস্র বর্ষের
অন্তরগূঢ় বাষ্পাকুল বিচ্ছেদক্রন্দন
এক দিনে।  ছিন্ন করি কালের বন্ধন
সেই দিন ঝরে পড়েছিল অবিরল
চিরদিবসের যেন রুদ্ধ অশ্রুজল
আর্দ্র করি তোমার উদার শ্লোকরাশি ।।

সেদিন কি জগতের যতেক প্রবাসী
জোড়হস্তে মেঘপানে শূন্যে তুলি মাথা
গেয়েছিল সমস্বরে বিরহের গাথা
ফিরি প্রিয়গৃহ-পানে ? বন্ধনবিহীন
নবমেঘপক্ষ -' পরে করিয়া আসীন
পাঠাতে চাহিয়াছিল প্রেমের বারতা
অশ্রুবাষ্প-ভরা  - দূর বাতায়নে যথা
বিরোহিণী ছিল শুয়ে ভূতল-শয়নে
মুক্তকেশে, স্নানবেশে, সজলনয়নে ?।
তাদের সবার গান তোমার সংগীতে
পাঠায়ে কি দিলে, কবি, দিবসে নিশীথে
দেশে দেশান্তরে খুঁজি বিরহিনী প্রিয়া ?
শ্রাবনে জাহ্নবী যথা যায় প্রবাহিয়া
টানি লয়ে দিশ -দিশান্তরে বারিধারা
মহাসমুদ্রের মাঝে হতো দিশাহারা।
পাষানশৃঙ্খলে যথা বন্দী হিমাচল
আষাঢ়ে অনন্ত শুন্যে হেরি মেঘদল
স্বাধীন , গগনচারী , কাতরে নিশ্বাসি
সহস্র কন্দর হতে বাস্প রাশি রাশি
পাঠায় গগন-পানে। ধায় তারা ছুটি
উধাও কামনা সম , শিখরেতে উঠি
সকলে মিলিয়া শেষে হয় একাকার ,
সমস্ত গগনতল করে অধিকার ।।

সেদিনের পরে গেছে কত শতবার
প্রথম দিবস স্নিগ্ধ নববরষার।
প্রতি বর্ষা দিয়ে গেছে নবীন জীবন
তোমার কাব্যের 'পরে করি বরিষণ
নববৃষ্টিবারিধারা , করিয়া বিস্তার
নবঘনস্নিগ্ধচ্ছায়া, করিয়া  সঞ্চার
নব নব প্রতিধ্বনি জলদমন্দ্রের ,
স্ফীত  করি স্রোতোবেগে তোমার ছন্দের
বর্ষাতরঙ্গিণীসম ।।

           কত কাল ধ'রে
কত সঙ্গীহীন জন প্রিয়াহীন ঘরে
বৃষ্টিক্লান্ত বহুদীর্ঘ লুপ্ততারাশশী
আষাঢ়সন্ধ্যায়, ক্ষীণ দীপালোকে বসি
ওই ছন্দ মন্দ মন্দ করি উচ্চারণ
নিমগ্ন করেছে নিজ বিজনবেদন।
সে-সবার কণ্ঠস্বর করনে আসে মম
সমুদ্রের তরঙ্গের কলধ্বনি-সম
তব কাব্য হতে ।।

           ভারতের পূর্বশেষে
আমি বসে আছি সেই শ্যামবঙ্গদেশে
যেথা জয়দেব কবি কোন বর্ষাদিনে
দেখেছিলা দিগন্তের তমালবিপিনে
শ্যামচ্ছায়া , পূর্ণ মেঘে মেদুর অম্বর ।।

আজি অন্ধকার দিবা , বৃষ্টি ঝরঝর ,
দুরন্ত পবন অতি - আক্রমণে তার
অরণ্য উদ্যতবাহু  করে হাহাকার।
বিদ্যুৎ দিতেছে উঁকি ছিঁড়ি মেঘভার
খরতর বক্র হাসি শূন্যে বরষিয়া ।।

অন্ধকার রুদ্ধগৃহে একেলা বসিয়া
পরিতেছি মেঘদূত।  গৃহত্যাগী মন
মুক্তগতি মেঘপৃষ্ঠে লয়েছে আসন ,
উড়িয়াছে দেশদেশান্তরে।  কোথা আছে
সানুমন আম্রকুট , কোথা বহিয়াছে
বিমল বিশীর্ণ রেবা বিন্ধপদমূলে
উপলব্যথিতগতি, বেত্রবতীকূলে
পরিণতফলশ্যামজম্বুবনচ্ছায়ে
কোথায় দর্শাণ গ্রাম রয়েছে লুকায়ে
প্রস্ফুটিত কেতকীর বেড়া দিয়ে ঘেরা,
পথতরুশাখে কোথা গ্রামবিহঙ্গেরা
বর্ষায় বাঁধিছে নীড় কলরবে ঘিরে
বনস্পতি ! না জানি সে কোন নদীতীরে
যুথীবনবিহারিণী বনাঙ্গনা ফিরে ,
তপ্ত কপোলের তাপে তপ্ত কর্ণৎপল
মেঘের ছায়ার  হতেছে বিকল।
ভ্রুবিলাসে শেখে নাই করা সেই নারী
জনপদবধূজন গগনে নেহারি
ঘনঘটা , উর্দ্ধনেত্রে চাহে মেঘ-পানে ;
ঘননীল ছায়া পড়ে সুনীল নয়ানে !
কোন মেঘশ্যামশৈলে মুগ্ধ সিদ্ধাঙ্গনা
স্নিগ্ধ নবঘন দেখি আছিল উন্মনা
শিলাতলে ; সহসা আসিতে মহা ঝড়
চকিত চকিত হয়ে ভয়ে জড়সড়
সম্বরি বসন ফিরে গুহাশ্রয় খুঁজি ,
বলে, মা গো , গিরিশৃঙ্গ উড়াইল বুঝি !
কোথায় অবন্তিপুরী , নির্বিন্ধ্যা তটিনী ,
কোথা শিপ্রানদীনীরে হেরে উজ্জয়িনী
স্বমহিমাচ্ছায়া ! সেথা নিশি দ্বিপ্রহরে
প্রণয়চাঞ্চল্য ভুলি ভবনশিখরে
সুপ্ত পারাবত ; শুধু বিরহবিকারে
রমণী বাহির হয় প্রেম-অভিসারে
সূচীভেদ্য অন্ধকারে রাজপথমাঝে
ক্কচ্চিৎবিদ্যুৎলোকে।  কথা সে বিরাজে
ব্রহ্মাবর্তে কুরুক্ষেত্র ! কথা কনখল ,
যেথা সেই জহ্নুকন্যা যৌবনচঞ্চল
গৌরির ভ্রুকুটিভঙ্গি করি অবহেলা
ফেনপরিহাসচ্ছলে  করিতেছে খেলা
লয়ে ধুর্জটির জটা চন্দ্রকরজ্জ্বল ।।
এইমতো মেঘরূপে ফিরি দেশে দেশে
হৃদয় ভাসিয়া চলে উত্তরিতে শেষে
কামনার মোক্ষধাম অলকার মাঝে ,
বিরহিনী প্রিয়তমা যেথায় বিরাজে
সৌন্দর্যের আদিসৃষ্টি।  সেথা কে পারিত
লয়ে যেতে তুমি ছাড়া করি অবারিত
লক্ষীর বিলাসপুরী - ভুবনে !
অনন্ত বসন্তে যেথা নিত্য পুষ্পবনে
নিত্য চন্দ্রালোকে , ইন্দ্রনীল শৈলমূলে
সুবর্ণসরোজফুল্ল সরোবরকুলে ,
মনিহর্ম্যে অসীম সম্পদে নিমগনা
কাঁদিতেছে একাকিনী বিরহবেদনা।
 মুক্ত বাতায়ন হতে যায় তারে দেখা -
শয্যাপ্রান্তে লীণতনু ক্ষীণশশীরেখা
পূর্বগগনের মুলে যেন অস্তপ্রায়।
কবি, তব মন্ত্রে আজি মুক্ত হয়ে যায়
রুদ্ধ এই হৃদয়ের বন্ধনের ব্যাথা।
লভিয়াছি বিরহের স্বর্গলোক , যেথা
চিরনিশি যাপিতেছে বিরহিনী প্রিয়া
অনন্তসৌন্দর্য-মাঝে একাকী জাগিয়া ।।

আবার হারায়ে যায়; হেরি, চারি ধার
বৃষ্টি পরে অবিশ্রাম।  ঘনায়ে আঁধার
আসিছে নির্জন নিশা।  প্রান্তরের শেষে
কেঁদে চলিয়াছে বায়ু অকূল -উদ্দেশে।
ভাবিতেছি অর্ধরাত্রি অনিদ্রানয়ান -
কে দিয়েছে হেন শাপ , কেন ব্যবধান ?
কেন ঊর্ধ্বে চেয়ে কাঁদে রুদ্ধ মনোরথ ?
কেন প্রেম আপনার নাহি পে পথ ?
সশরীরে কোন নর গেছে সেইখানে ,
মানসসরসীতীরে বিরহশয়ানে ,
রবিহীন মণিদ্বীপ্ত প্রদোষের দেশে
জগতের নদী গিরি সকলের শেষে !



        অহল্যার প্রতি 

কি স্বপ্নে কাটালে তুমি দীর্ঘ দিবানিশি ,
অহল্যা , পাষাণরূপে ধরাতলে মিশি
নির্বাপিত-হোম-অগ্নি তাপসবিহীন
শূন্য তপোবনচ্ছায়ে ! আছিলে বিলীন
বৃহৎ পৃথীর সাথে হয়ে একদেহ,
তখন কি জেনেছিলে তার মহাস্নেহ ?
ছিল কি পাষাণতলে অস্পষ্ট চেতনা ?
জীবধাত্রী জননীর বিপুল বেদনা বিপুল বেদনা
মাতৃধৈর্যে মৌন মূক সুখ দুঃখ যত
অনুভব করেছিলে স্বপ্নের মতো
সুপ্ত আত্মা মাঝে ? দিবারাত্রি অহরহ
লক্ষকোটি পরানির মিলন-কলহ –
আনন্দবিষাদক্ষুব্ধ ক্রন্দন গর্জন ,
অযুত পান্থের পদধ্বনি অনুক্ষন
পশিত কি অভিশাপনিদ্রা ভেদ  ক'রে
কর্ণে তোর – জাগাইয়া রাখিত কি তোরে
নেত্রহীন মূঢ় রূঢ় অর্ধজাগরণে ?।

বুঝিতে কি পেরেছিলে আপনার মনে
নিত্য নিদ্রাহীন ব্যাথা মহাজননীর ?
যেদিন বহিত নব বসন্তসমীর
ধরণীর সর্বাঙ্গের পুলকপ্রবাহ
স্পর্শ কি করিত তোরে ? জীবন-উৎসাহ
ছুটিত  সহস্রপথে মরুদিগ্বিজয়ে
সহস্র আকারে , উঠিত সে ক্ষুব্ধ হয়ে
তোমার পাষান ঘেরি করিতে নিপাত
অনুর্বরা -অভিশাপ তব ; সে আঘাত
জাগাত কি জীবনের কম্প তবে দেহে ?।

যামিনী অসিত যবে মানবের গেহে
ধরণী লইত টানি শ্রান্ত তণুগুলি ।
আপনার বক্ষ-'পরে । দুঃখ শ্রম ভুলি
ঘুমাত অসংখ জীব - জাগিত আকাশ –
তাদের শিথিল অঙ্গ , সুষুপ্ত নিশ্বাস
বিভোর কোরিয়া দিত ধরণীর বুক ।
মাতৃঅঙ্গে সেই কোটিজীবস্পর্শসুখ
কিছু তার পেয়েছিলে আপনার মাঝে ?
যে গোপন অন্তঃপুরে জননী বিরাজে –
বিচিত্রিত যবনিকা পত্রপুষ্পজালে
বিবিধ বর্ণের লেখা , তারি অন্তরালে
রহিয়া অসূর্য্যম্পশ্য নিত্য চুপে চুপে
ভরিছ সন্তানগৃহ ধনধান্যরূপে
জীবনে যৌবনে – সেই গূঢ় মাতৃকক্ষে
সুপ্ত ছিলে এতকাল ধরণীর বক্ষে
চিররাত্রি সুশীতল বিস্মৃতি আলয়ে –
যেথায় অন্তকাল ঘুমায় নির্ভয়ে
লক্ষ জীবনের ক্লান্তি ধুলির শয্যায় ,
নিমেষে নিমেষে যেথা ঝ'রে প'ড়ে যায়
দিবাটাপে শুষ্ক ফুল , দগ্ধ উল্কা তারা ,
জীর্ন কীর্তি , শ্রান্ত সুখ , দুঃখ দাহতারা ।।

সেথা স্নিগ্ধ হস্ত দিয়ে পাপতাপরেখা
মুছিয়া দিয়েছে মাতা । দিলে আজি দেখা
ধরণীর সদ্যজাত কুমারীর মতো
সুন্দর সরল শুভ্র । হয়ে বাক্যহত
চেয়ে আছো প্রভাতের জগতের পানে ।
যে শিশির পড়েছিল তোমার পাষাণে
রাত্রিবেলা , এখন সে কাঁপিছে উল্লাসে
আজানুচুম্বিত মুক্ত কৃষ্ণ কেশপাশে ।
যে শৈবাল রেখেছিল ঢাকিয়া তোমায়
ধরণীর শ্যামশোভা অঞ্চলের প্রায়
বহুবর্ষ হতে, পেয়ে বহু বর্ষাধারা
সতেজ সরস ঘন, এখনো তাহারা
লগ্ন হয়ে আছে তব নগ্ন গৌড় দেহে
মাতৃদত্ত বস্ত্রখানি সুকোমল স্নেহে ।।

হাসে পরিচিতি হাসি নিখিল সংসার ।
তুমি চেয়ে নির্নিমেষ । হৃদয় তোমার
কোন দূর কালক্ষেত্রে চলে গেছে একা
আপনার ধূলিলুপ্ত পদচিহ্নরেখা
পদে পদে চিনে চিনে । দেখিতে দেখিতে
চারি দিক হতে সব এল চারি ভিতে
জগতের পূর্ব পরিচয় । কৌতূহলে
সমস্ত সংসার ওই এল দলে দলে
সম্মুখে তোমার ; থিম গেল কাছে এসে
চমকিয়া । বিস্ময়ে রহিল অনিমেষে ।।
অপূর্ব রহস্যময়ী মূর্তি বিবসন ,
নবীন শৈশবে স্নাত সম্পূর্ণ যৌবন –
পূর্ণস্ফুট পুস্প যথা শ্যামপত্রপুটে
শৈশবে যৌবনে মিশে উঠিয়াছে ফুটে
এক বৃন্তে । বিস্মৃতিসাগর - নীলনীরে
প্রথম ঊষার মতো উঠিয়াছ ধীরে ।
তুমি বিশ্বপানে চেয়ে মানিছ বিস্ময় ,
বিশ্ব তোমাপানে চেয়ে কথা নাহি কয় –
দোঁহে মুখোমুখি । অপাররহস্যতীরে
চিরপরিচয়মাঝে নব পরিচয় ।।

শান্তিনিকেতন, ১১/১২ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭


                            আমার সুখ 

তুমি কি করেছো মনে               দেখেছো পেয়েছো তুমি
                        সীমারেখা  মম ?
ফেলিয়া দিয়াছ মোরে               আদি অন্ত শেষ ক'রে
                        পড়া পুঁথি সম ?
নাই সীমা আগে পাছে,             যত চাও তত আছে,
           যতই আসিবে কাছে তত পাবে মোরে।
আমারেও দিয়ে তুমি                 এ বিপুল বিশ্বভুমি
           এ আকাশ এ বাতাস দিতে পারো ভ'রে ।
আমাতেও স্থান পেত                 অবাধে সমস্ত তব
                         জীবনের আশা ।
একবার ভেবে দেখো                 এ পরানে ধরিয়াছে
                         কত ভালোবাসা ।।
সহসা কি শুভক্ষণে                  অসীম হৃদয়রাশি
                         দৈবে পড়ে চোখে !
দেখিতে পায়নি যদি                  দেখিতে পাবে না আর ,
                         মিছে মরি ব'কে ।
আমি যা পেয়েছি তাই                সাথে নিয়ে ভেসে যাই ,
              কোনো খানে সীমা নাই ও মধু মুখের।
শুধু স্বপ্ন শুধু স্মৃতি,                    তাই নিয়ে থাকি নিতি -
               আর আশা নাহি রাখি সুখের দুঃখের ।
আমি যাহা দেখিয়াছি               আমি যাহা পাইয়াছি
                         এ জনম-সই
জীবনের সব শুন্য                     আমি যাহে ভরিয়াছি
                        তোমার তা কই !

লোহিত সমুদ্র, ১২ কার্তিক ১২৯৭





Elephant Safari at Pobitora - The rhino park of Assam

It was around 9:30 of night. I was in my bed doing some non-productive internet surfing in my Nokia 8 when I got a call from my senior colleague and our Company Secretary Dipankar Barua who asked me if I would like to go for a short trip to Pobitora. It was a Friday evening and next day evening I had a get-together with my friends which I didn't want miss. So I wanted to know the plan. He told me that its a sudden plan for him too and he wanted to go early morning and return within 10. Pobitora was only an hours drive from Guwahati, so I agreed.

He lives at Rajgarh, hardly one kilometre from my rented house at Guwahati. I reached his place at around 6. He was ready and awaiting me. We started at 6.15. 

After an hour when we reached Pobitora, parked the car and went to the ticket counter it was 7.15 and we were told that its all booked but there may be a chance as one person has not called. We waited upto 7:30 when the guy at the ticket counter called us and started to fill the entry form. It was a reasonable Rs. 450 per person for elephant safari and an additional 100 for entry into the sanctuary. We crossed the hanging bridge over the large pond separating the sanctuary from office buildings. I was there for second time and I must say the bridge and views from the bridge, both are beautiful.

The bridge from the sanctuary side

There were six elephants waiting to go for safari. But it looked like they were waiting two more elephants to return from sanctuary and join them. After some wait the elephants came from Jungle and were readied for the safari. The waiting tourists rode elephants one by one, three of them on one elephant excluding the mahut.

Road leading into the sancturay area

We started at around 8. It was my first elephant ride. I was not sure how it would feel, but I was surely excited. One elephant calf was also accompanying the herd. It was naughty and playful befitting its age.  After just two hundred metres down the road we took right turn through a belt of trees and soon reached the grazing field. I never saw rhinos in the open. The moment we entered open grassland that was burnt down, we could see two rhinos grazing. They looked like the most innocent and peaceful animal in the wild.

As we approached the couple, they raised their heads as if annoyed with the presence of outsider in their territory but there was no sign of violent movement. They slightly turned and slowly started walking away from us. I tried to shoot the couple with my camera but in vain. The lumbering of the elephant didn't allow the camera to be steady and without any support I hardly could bring the rhino couple in my camera frame. Most of the shots were out of focus or object partially out of frame.

Just then someone shouted 'see there's a jackal'. By instinct I looked towards the direction the people were trying to indicate while picking up my camera. I saw a fox running in the grass in the distant among the herd of cows. Suddenly I thought should I shoot a fox? I have seen them in an around my home in my hometown and heard them howling in the night almost everyday. In next moment the fox almost disappeared in the grass and I tried look somewhere else for another piece of interest.

Soon we could see a few wild buffaloes near a shallow waterbody mostly muddy. It looked like all those buffaloes just came out of the mud. The mud camouflaged their sturdy and black muscular bodies and made them so ugly that I had no interest shooting a photo of them.

I started little chit-chat with the Mahut regarding their profession and about the sanctuary. He told us that there are 102 rhino in the sanctuary. My senior colleague also informed me that the sanctuary have highest density of rhino. It seemed true to me as we could see rhino all around us by that time. Some in close distance some far away grazing quietly. The Mahuts were very smart and stopped from where we could take best possible shots. But most clicks returned garbage except one in which I could capture the newborn baby rhino with its mom.

Mother rhino with its new born baby
The safari lasted for an hour. It was refreshing to be among the wild beasts and seeing them so close. The ride on elephants also is so thrilling.

After the safari we went to a nearby eco-camp by the river Brahmaputra and had breakfast there. Its a newly opened eco-camp that boasts of having ATV, parasailing, boating etc though it looked like nothing is functional except night camping. But I must accept the location of the eco camp is very beautiful and far from the madding crowd in the lap of nature. We returned by 12:30 after a sweet short trip that made my weekend.