Juta abiskar - জুতা আবিষ্কার - Poem by Rabindranath Tagore

কহিল হবু, 'শুন গো গবুরায়
            কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র ,
মলিন ধুলা লাগিবে কেন পায়
            ধরণী মাঝে চরন ফেলা মাত্র ।
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি 
            রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি ।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
            রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি !
                    শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার 
                              নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর ।'

Aagami - আগামী - Poem by Sukanta Bhattacharya

জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ, 
আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ ;
মাটিতে লালিত, ভীরু, শুধু আজ আকাশের ডাকে 
মেলেছি সন্ধিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে ।
যদিও নগণ্য আমি, তুচ্ছ বটবৃক্ষের সমাজে 
তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে,
বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোর আনাগোনা 
শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা ।
আজ শুধু অঙ্কুরিত, জানি কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা 
উদ্দাম হাওয়ার তালে তাল রেখে নেড়ে যাবে মাথা ;

Charpotro - ছাড়পত্র - Poem by Sukanta Bhattacharya

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম ঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার 
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে ।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত 
কী এক দুর্বোধ প্রতিজ্ঞায় ।

Sonar tori - সোনার তরী - Poem by Rabindranath Tagore

 গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা ।
কূলে একা বসে আছি নাহি ভরসা ।
রাশি রাশি ভারা ভারা           ধান কাটা হলো সারা,
ভরা নদী খুরধারা        খরপরশা ¬
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা ।।
একখানি ছোটো খেত , আমি একেলা ¬
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা ।।
পরপারে দেখি আঁকা               তরুছায়ামসী -মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা          প্রভাতবেলা ।
এ পারেতে ছোটো খেত , আমি একেলা ।।

Bosundhora - বসুন্ধরা - Poem by Rabindranath Tagore

আমারে ফিরায়ে লহ ওই বসুন্ধরে
কোলের সন্তান তব কোলের ভিতরে
বিপুল অঞ্চলতলে।  ওগো মা মৃন্ময়ী ,
তোমার মৃত্তিকা মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই
দিগ্বিদিকে আপনারে দিই বিস্তারিয়া
বসন্তের আনন্দের মতো।  বিদারিয়া
এ বক্ষপঞ্জর , টুটিয়া পাষানবন্ধ
সঙ্কীর্ণ প্রাচীর , আপনার নিরানন্দ
অন্ধ কারাগার - হিল্লোলিয়া , মর্মরিয়া
কম্পিয়া, স্খলিয়া, বিকিরিয়া, বিচ্ছুরিয়া ,
শিহরিয়া, সচকিয়া আলোকে পুলকে ,
প্রবাহিয়া চলে যাই সমস্ত ভূলোকে

Sworgo hoite biday - স্বর্গ হইতে বিদায় - Poem by Rabindranath Tagore

 ম্লান হয়ে এল কণ্ঠে মন্দারমল্লিকা,
হে মহেন্দ্র, নির্বাপিত জ্যোতির্ময় টিকা
মলিন ললাটে । পুণ্যবল হল ক্ষীণ,
আজি মোর স্বর্গ হতে বিদায়ের দিন
হে দেব, হে দেবীগণ । বর্ষ লক্ষশত 
যাপন করেছি স্বর্গে দেবতার মতো 
দেবলোকে । আজি শেষ বিচ্ছেদের ক্ষণে 
লেশমাত্র অশ্রুরেখা স্বর্গের নয়নে 
দেখা যাবে এই আশা ছিল । শোকহীন 
হৃদিহীন সুখস্বর্গভূমি উদাসীন 
চেয়ে আছে । লক্ষ লক্ষ বর্ষ তার
চক্ষের পলক নহে । অশ্বত্থশাখার 

Choddosho saal - ১৪০০ সাল - Poem by Rabindranath Tagore

  
             আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
                     কৌতুহলভরে,
             আজি হতে শতবর্ষ পরে !
আজিকার নব বসন্তের প্রভাতের আনন্দের
                     লেশমাত্র ভাগ,
আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
             আজিকার কোনো রক্তরাগ -
অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে
                         তোমাদের করে,
             আজি হতে শতবর্ষ পরে  ?।

Jete nahi dibo - যেতে নাহি দিব - Poem by Rabindranath Tagore

     
দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি, বেলা দ্বিপ্রহর
হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর ।
জনশুন্য পল্লীপথে ধূলি উড়ে যায়
মধ্যাহ্নবাতাসে। স্নিগ্ধ অশ্বত্থের ছায়
ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিনি জীর্ণ বস্ত্র পাতি
ঘুমায়ে পড়েছে।  যেন রৌদ্রামায়ি রাতি
ঝাঁ ঝাঁ করে চারি দিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম -
শুধু মোর ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম ।।
গিয়েছে আশিন। পূজার ছুটির শেষে
ফিরে  যেতে হবে আজি বহুদূর দেশে
 কর্মস্থানে।  ভৃত্যগণ ব্যস্ত হয়ে
বাঁধিছে জিনিস-পত্র দরাদড়ি লয়ে -
হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি এ ঘরে, ও ঘরে ।

Hing Ting Chhot - হিং টিং ছ্ট - A poem by Rabindranath Tagore

            হিং টিং ছ্ট
              স্বপ্নমঙ্গল

স্বপ্ন দেখেছেন রাত্রে হবুচন্দ্র ভূপ  ¬
অর্থ তার ভেবে ভেবে গবুচন্দ্র চুপ
শিয়রে বসিয়া যেন তিনটি বাঁদরে
উকুন বাছিতেছিল পরম আদরে ¬
একটু নড়িতে গেলে গালে মারে চড় ,
চোখে মুখে লাগে তার নখের আঁচড় ।
সহসা মিলালো তারা এল এক বেদে , 
'পাখি উড়ে গেছে' বলে মরে কেঁদে কেঁদে  ।
সম্মুখে রাজারে দেখি তুলি নিল ঘাড়ে ,
ঝুলায়ে বসায়ে দিল উচ্চ এক দাঁড়ে ।
নীচেতে দাঁড়ায়ে এক বুড়ি থুড়থুড়ি
হাসিয়া পায়ের তলে দেয় সুড়সুড়ি ।
রাজা বলে 'কি আপদ '  কেহ নাহি ছাড়ে ¬
পা দুটা তুলিতে চাহে, তুলিতে না পারে ।
পাখির মতন রাজা করে ছটফট
বেদে কানে কানে বলে ¬ হিং টিং ছট ।
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান ,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান ।।

Puraton bhrityo - পুরাতন ভৃত্য - Poem by Rabindranath Tagore


ভুতের মতন চেহারা যেমন নির্বোধ অতি ঘোর -
যা-কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর ।
উঠিতে বসিতে করি বাপান্তও, শুনেও শোনে না কানে -
যত পায় বেত পায় না বেতন, তবু না চেতন মানে ।
বড়ো প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ , চিৎকার করি 'কেষ্টা' -
যত করি তাড়া নাহি পায় সাড়া, খুঁজে ফিরি সারা দেশটা ।
তিনখানা দিলে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে -
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা ক'রে আনে ।
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে নিদ্রাটি আছে সাধা -
মহাকলরবে গালি দেই যবে 'পাজি হতভাগা গাধা'
দরজার পাশে দাড়িয়ে সে হাসে, দেখে জ্বলে যায় পিত্ত ।
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার - বড়ো পুরাতন ভৃত্য ।।

Dui bigha jomi - দুই বিঘা জমি - Poem by Rabindranath Tagore

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে ।
বাবু বলিলেন , 'বুঝেছ উপেন ? এ জমি লইব কিনে ।'
কাহিলাম আমি, 'তুমি ভূস্বামী , ভূমির অন্ত নাই -
চেয়ে দেখ মোর আছে বড়জোর মরিবার মত ঠাঁই ।'
শুনি রাজা কহে, ' বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা ,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা -
ওটা দিতে হবে ।' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি 
সজল চক্ষে, ' করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি ।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া ,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া !'
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে ,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, 'আচ্ছা , সে দেখা যাবে ।'

Premer Obhishek - প্রেমের অভিষেক - by Rabindranath Tagore - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


তুমি মোরে করেছ সম্রাট।  তুমি মোরে 
সাজায়েছো কন্ঠ মোর । তব রাজটিকা 
পরায়েছো গৌরবমুকুট ; পুষ্পডোরে 
দীপিছে ললাট মাঝে মহিমার শিখা 
অহর্নিশি।  আমার সকল দৈন্য লাজ ,
আমার ক্ষুদ্রতা যত , ঢাকিয়াছে আজ 
তব রাজ আস্তরণে।  হৃদিশয্যাতল 
শুভ্র দুগ্ধফেননিভ, কোমল শীতল ,
তারই মাঝে বসয়েছো।  সমস্ত জগৎ 
বাহিরে দাঁড়ায়ে আছে, নাহি পায় পথ 
সে অন্তর - অন্তঃপুরে।  নিভৃত সভায় 

Bolaka - বলাকা - Poem by Rabindranath Tagore

 সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা
            আঁধারে মলিন হলো যেন খাপে ঢাকা
                             বাঁকা তলোয়ার !
     দিনের ভাঁটার  শেষে রাত্রির জোয়ার
এলো তার ভেসে-আসা তারাফুল নিয়ে কালো জলে ;
            অন্ধকার গিরিতটতলে
                       দেওদার-তরু সারে সারে ;
মনে হলো , সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে ,
       বলিতে না পরে স্পষ্ট করি
অব্যক্ত ধ্বনির পুঞ্জ অন্ধকারে উঠিছে গুমরি ।।
                     সহসা শুনিনু সেই ক্ষণে
                              সন্ধ্যার গগনে
           শব্দের বিদ্যুৎছটা শূন্যের প্রান্তরে
মুহূর্তে ছুটিয়া গেল দূর হতে দূরে দূরান্তরে।

Kokadeutar Har - Nabakanta Barua (12) - ককাদেউতাৰ হাড় - নৱকান্ত বৰুৱা

ককাদেউতাৰ হাড়
(দ্বাদশ অধ্যায় ) 


এঙা চোলাটো পিন্ধি ভোগাই চ'ৰাৰ মুখত থিয় হ'ল ।

লিগিৰাই সুধিলে, " দেউতা, দোলা নে ?"

"ঘোঁৰা" ভোগায়ে ক'লে ।

লিগিৰাৰ মুখ ক'লা পৰিল । কাৰণ দোলাত হ'লে তামোলৰ টেমা লৈ সিও কাষে কাষে যাব পাৰিলেহঁতেন । ঘোঁৰাত গ'লে দেউতাই কাকো লগত নলয় ।

ঘোঁৰা আহি চোতাল পোৱাৰ পিচত ভোগাই আকো ভিতৰ সোমাই গ'ল । ভিতৰলৈ চাই মাতিলে, "সুমলাৰ মাক !"

সুমলা আৰু সুমলাৰ মাক অৰ্থাৎ মাহিন্দ্ৰীয়ে দুৱাৰ ডলিত থিয় দিলে ।

"মোৰ অহাত অলপ পলম হ'ব পাৰে । চাওঁ আঙঠিটো ।"

Kakadeutar har - Nabakanta Barua (11) : ককাদেউতাৰ হাড় - নবকান্ত বৰুৱা

ককাদেউতাৰ হাড়

( একাদশ অধ্যায় )


বাঘ জালত পৰিল । ভোগাইৰ ইচ্ছা , বাঘটো যিমান সোনকালে পাৰে খতম কৰাই ভাল । বাঘটো মৰাৰ লগতে তেওঁ বহুতো কথা পআঙি থৈছে , যিবোৰ কথা স্পষ্টকৈ কাকো ক'ব নোৱাৰে তেওঁ । কিন্তু বাঘ ভেটাটো এটা সামাজিক উৎসৱৰ দৰে । ইয়াৰ ৰং চাবলৈ দূৰ গাঁৱৰ মানুহো ভাগি, ভুঁহৰি আহে । সাধাৰনতে তিনি-চাৰিদিনমান বাঘটো জালৰ ভিতৰতে ৰখা হয় । জালৰ কেউকাষে যেন মানুহৰ মেলাহে বহে । জালৰ কাষে কাষে টঙি সাজি তাৰ ওপৰত বহি ডেকা ল'ৰামখাই বাঘৰ অলেখ-লেখ চাই থাকে । টঙি সাজিবলৈ কাৰ বাঁহ কোনে আনে ঠিক নাই । তাত হকা-বধা কৰিবৰো কাৰো এক্তিয়াৰ নাই । ৰাতি বৰ জুই একোকুৰা ধৰি মানুহ বহি থাকে । ৰখীয়া- পৰীয়াৰ বাবে ভাত-পানীও ৰন্ধা হয় । ওচৰৰ মানুহৰ পাণ-তামোল কল-কুঁহিয়াৰ খাস্তাং হয় । আনকি ওচৰৰ গাঁৱৰ হাঁহ , পাৰ, ছাগলী আদিও হেৰায় । সেইবোৰ কোনেও বিচাৰিবলৈ সাহ নকৰে । ৰাতি কিৰিলি পাৰি ল'ৰাহতে বনঘোষা গায় । অবাইচ মাতৰ কোবত গোটেইখন মহগুৱালৰ মেল যেন হয় । পিচে , সকলো সময়তে জালৰ কাষে কাষে জাঠি - জোং লৈ মানুহ সষ্টম হৈ থাকে । বাঘ যদি কেনেবাকৈ ভাগিল - বৰ জগৰৰ কথা । যিটো খেলৰ জালৰ ফালে বাঘ পলায় সেই খেলে দন্দ ভৰিব লাগে ।সাতে-সোতৰে ডেকাহঁতে ভাল পালেও ওচৰ গাঁৱৰ মানুহে যিমান সোনকালে পাৰি খেলখন ভাঙিলেহে ভাল পায় ।