কার্তিকের ভােরে:১৩৪০ - জীবনানন্দ দাশ
চোখে মুখে চুলের ওপরে
যে শিশির ঝরল তা
শালিক ঝরাল ব’লে ঝরে
আমলকী গাছ ছুঁয়ে তিনটি শালিক
কার্তিকের রােদে আর জলে
আমারই হৃদয় দিয়ে চেনা তিন নারীর মতন;
সূর্য? না কি সূর্যের চপ্পলে
পা গলিয়ে পৃথিবীতে এসে
পৃথিবীর থেকে উড়ে যায়
এ জীবনে ঢের শালিক দেখেছি
তবু সেই তিনজন শালিক কোথায়।
আমি যদি হতাম - জীবনানন্দ দাশ
আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনাে এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;
তাহলে আজ এই ফারুনের রাতে
ঝাউয়েরা শাখার পেছনে চাদ উঠতে দেখে
আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে
আকাশের রূপালী শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম—
তােমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তােমার রক্তের স্পন্দন—
নীল আকাশে খই ক্ষেতের সােনালি ফুলের মতাে অজস্র তারা,
শিরীষ বনের সবুজ, রােমশ নীড়ে
সােনার ডিমের মতাে
ফাল্গুনের চাঁদ।
হয়তাে গুলির শব্দ:
আমাদের তির্যক গতিস্রোত,
আমাদের পাখায় পিস্টনের উল্লাস,
আমাদের কণ্ঠে উত্তর হাওয়ার গান।
হয়তাে গুলির শব্দ আবার;
আমাদের স্তব্ধতা,
আমাদের শান্তি।
আজকের জীবনের এই টুকরাে টুকরাে মৃত্যু আর থাকত না;
থাকত না আজকের জীবনের টুকরাে সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার;
আমি যদি বনহংস হতাম;
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনাে এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে।
থাকত না আজকের জীবনের টুকরাে সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার;
আমি যদি বনহংস হতাম;
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনাে এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে।
ধান কাটা হয়ে গেছে - জীবনানন্দ দাশ
ধান কাটা হ’য়ে গেছে কবে যেন—ক্ষেতে মাঠে পড়ে আছে খড়
পাতা কুটো ভাঙা ডিম—সাপের খােলস নীড় শীত।
এই সব উৎরায়ে ঐখানে মাঠের ভিতর।
ঘুমাতেছে কয়েকটি পরিচিত লোক আজ—কেমন নিবিড়।
ঐখানে একজন শুয়ে আছে—দিনরাত দেখা হ’তাে কত কত দিন,
হৃদয়ের খেলা নিয়ে তার কাছে করেছি যে কত অপরাধ;
শান্তি তবু: গভীর সবুজ ঘাস ঘাসের ফড়িং
আজ ঢেকে আছে তার চিন্তা আর জিজ্ঞাসার অন্ধকার স্বাদ।
বুনাে হাঁস - জীবনানন্দ দাশ
পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে
জলা মাঠ ছেড়ে দিয়ে চাদের আহ্বানে
বুনাে হাঁস পাখা মেলে—শাঁই শাঁই শব্দ শুনি তার;
এক- -দুই-তিন–চার—অজস্র—অপার—
রাত্রির কিনারা দিয়ে তাহাদের ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া
ইঞ্জিনের মতাে শব্দে; ছুটিতেছে—ছুটিতেছে তারা।
তারপর পড়ে থাকে নক্ষত্রের বিশাল আকাশ,
হাঁসের গায়ের ঘ্রাণ—দু একটা কল্পনার হাঁস;
মনে পড়ে কবেকার পাড়াগাঁর অরুণিমা সান্যালের মুখ;
উড়ুক উড়ুক তারা পউষের জ্যোৎস্নায় নীরবে উড়ুক
কল্পনার হাঁস সব— পৃথিবীর সব ধ্বনি সব রঙ মুছে গেলে পর
উড়ুক উড়ুক তারা হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতর।
বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাশ
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
শিয়াল পণ্ডিত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
কুমির দেখলে, সে শিয়ালের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তখন সে ভাবলে, 'ও ঢের লেখাপড়া জানে, তাতেই খালি আমাকে ফাঁকি দেয়। আমি মূর্খ লোক, তাই তাকে আঁটতে পারি না।' অনেকক্ষণ ভেবে কুমির এই ঠিক করল যে, নিজের সাতটা ছেলেকে শিয়ালের কাছে দিয়ে খুব করে লেখাপড়া শেখাতে হবে। তার পরের দিনই সে ছানা সাতটাকে সঙ্গে করে শিয়ালের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হল। শিয়াল তখন তার গর্তের ভিতরে বসে কাঁকড়া খাচ্ছিল। কুমির এসে ডাকলে,
'শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত, বাড়ি আছ?' শিয়াল বাইরে এসে বললে, 'কী ভাই, কী মনে করে?'
কুমির বললে, 'ভাই, এই আমার ছেলে সাতটাকে তোমার কাছে এনেছি। মূর্খ হলে করে খেতে পারবে না। ভাই, তুমি যদি এদের একটু লেখাপড়া শিখিয়ে দাও।' শিয়াল বললে, 'সে আর বলতে? আমি সাতদিনে সাতজনকে পড়িয়ে পণ্ডিত করে দেব।' শুনে কুমির তো খুব খুশি হয়ে ছানা সাতটাকে রেখে চলে গেল।
তখন শিয়াল তাদের একটাকে আড়ালে নিয়ে বললে—
'পড় তো বাপু— কানা খানা গানা ঘানা,
কেমন লাগে কুমির ছানা?'
ডানপিটে - Daanpite - Poems of Sukumar Ray
কোন দিন ফাঁসি যাবে নয় যাবে জেলে ।
একটা সে ভূত সেজে আঠা মেখে মুখে ,
ঠাঁই ঠাঁই শিশি ভাঙে শ্লেট দিয়ে ঠুকে !
অন্যটা হামা দিয়ে আলমারি চড়ে ,
খাট থেকে রাগ ক'রে দুম্ দাম্ পড়ে !
কি মুস্কিল - Ki Muskil - Poems of Sukumar Ray
সরকারী সব অফিসখানার কোন সাহেবের কদর কত ।
কেমন ক'রে চাটনি বানায়, কেমন ক'রে পোলাও করে ,
হরেক রকম মুষ্টিযোগের বিধান লিখছে ফলাও করে
সাবান কালি দাঁতের মাজন বানাবার সব কায়দা কেতা ,
পূজা পার্বন তিথির হিসাব শ্রাদ্ধবিধি লিখছে হেথা ।
সব লিখেছে , কেবল দেখ পাচ্ছিনেকো লেখা কোথায় -
পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া কেমন ক'রে ঠেকাব তায় !
Narad ! Narad ! - নারদ ! নারদ ! - Poems of Sukumar Ray
Golpo Bola - গল্প বলা - Poems of Sukumar Ray
Daare daare droom - দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম - Poems of Sukumar Ray
-
More poems here অবশেষ ফুলিল মালতী, ফুলি সৰি গ'ল, বিলোৱা সৌৰভ মাত্ৰ জগতত ৰ'ল । ভাগি গ'ল বীণখনি, ছিগি গ...
-
Read other poems of Ram Gogoi শাওণৰ মেঘমুক্ত নীলাকাশ সূৰ্য্যস্নাত ক্লেদময় হে বিশাল পথাৰ ....... বিপ...
-
কাৰ পৰশত ফুলিলি বান্ধৈ অ' মোৰ সাদৰী ফুলাম পাহি ? শ্যামলী পাতৰ ওৰণি গুচাই কাৰ ফালে চাই মাৰিলি হাঁহি ? কোন নন্দনত লগালি চমক, নাচিছে...
-
This poem from Kuhipath is a prayer by a kid to God. Without knowing who God is, where He lives or how to pray him its the love of God an...
-
সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা আঁধারে মলিন হলো যেন খাপে ঢাকা বাঁকা তলোয়ার ! দিন...
-
People who studied in Assam in general and in Assamese medium in particular know Kuhipath, the very first book one gets to read in schools...
-
মহান শিল্পী কলাগুৰু বিষ্ণুপ্ৰসাদ ৰাভা অসমীয়া সাহিত্যক উপহাৰ দি গৈছে বহু সোণসেৰীয়া গীত । তাৰেই কিছু গীত ইয়াতে প্ৰস্তুত কৰা হ'ল । ১) ম...
-
Today we are publishing some sweet poems from Kuhipath that every student who studied in Assamese medium primary school can relate to. আ...
-
Read more poems of Hiren bhattacharya here এদিন শাওণ আজি শাওণৰ বাৰ কি তেৰ এৰাল ছিঙি ক'লা ডাৱৰবোৰে আকাশখনত হেম্বেলিয়াই আছে ...
-
Story has it that Kach, son of the Brihaspati - the Guru of the Gods, was sent to Shukracharya, Guru of the Daityas, to learn the Mrita-sa...