Ebar firao more - এবার ফিরাও মোরে - Poem by Rabindranath Tagore

 
সংসারে সবাই যবে সারাক্ষন শতকর্মে রত ,
তুইশুধু ছিন্নবাধা পলাতক বালকের মতো 
মধ্যাহ্নে মাঠের মাঝে একাকী বিষণ্ণ তরুচ্ছায়ে 
দূরবনগন্ধবহ মন্দগতি ক্লান্ত তপ্ত বায়ে 
সারাদিন বাজাইলি বাঁশি । ওরে , তুই ওঠ আজি। 
আগুন লেগেছে কোথা !  কার শঙ্খ উঠিয়াছে বাজি 
জাগাতে জগৎ জনে ! কোথা হতে ধ্বনিছে ক্রন্দনে 
শূন্যতল ! কোন অন্ধ কারা-মাঝে জর্জর বন্ধনে
অনাথিনী মাগিছে সহায় ! স্ফীতপ্রায় অপমান 
অক্ষমের বক্ষহতে রক্ত শুষি করিতেছে পান 

Sukh - সুখ - poem by Rabindranath Tagore

আজি মেঘমুক্ত দিন ; প্রসন্ন আকাশ
হাসিছে বন্ধুর মতো ; সুমন্দ বাতাস
মুখে চক্ষে বক্ষে আসি লাগিছে মধুর ,
অদৃশ্য অঞ্চল যেন সুপ্ত দিগবধুর 
উড়িয়া পড়িছে গায়ে । ভেসে যায় তরী
প্রশান্ত পদ্মার স্থির বক্ষের উপরি 
তরল কল্লোলে । অর্ধমগ্ন বালুচর 
দূরে আছে পড়ি , যেন দীর্ঘ জলচর 
রৌদ্র পোহাইছে শুয়ে । ভাঙা উচ্চতীর ;
ঘনচ্ছায়াপূর্ণ তরু ; প্রচ্ছন্ন কুটির ।

Juta abiskar - জুতা আবিষ্কার - Poem by Rabindranath Tagore

কহিল হবু, 'শুন গো গবুরায়
            কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র ,
মলিন ধুলা লাগিবে কেন পায়
            ধরণী মাঝে চরন ফেলা মাত্র ।
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি 
            রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি ।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
            রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি !
                    শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার 
                              নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর ।'

Aagami - আগামী - Poem by Sukanta Bhattacharya

জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ, 
আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ ;
মাটিতে লালিত, ভীরু, শুধু আজ আকাশের ডাকে 
মেলেছি সন্ধিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে ।
যদিও নগণ্য আমি, তুচ্ছ বটবৃক্ষের সমাজে 
তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে,
বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোর আনাগোনা 
শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা ।
আজ শুধু অঙ্কুরিত, জানি কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা 
উদ্দাম হাওয়ার তালে তাল রেখে নেড়ে যাবে মাথা ;

Charpotro - ছাড়পত্র - Poem by Sukanta Bhattacharya

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম ঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার 
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে ।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত 
কী এক দুর্বোধ প্রতিজ্ঞায় ।

Sonar tori - সোনার তরী - Poem by Rabindranath Tagore

 গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা ।
কূলে একা বসে আছি নাহি ভরসা ।
রাশি রাশি ভারা ভারা           ধান কাটা হলো সারা,
ভরা নদী খুরধারা        খরপরশা ¬
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা ।।
একখানি ছোটো খেত , আমি একেলা ¬
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা ।।
পরপারে দেখি আঁকা               তরুছায়ামসী -মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা          প্রভাতবেলা ।
এ পারেতে ছোটো খেত , আমি একেলা ।।

Bosundhora - বসুন্ধরা - Poem by Rabindranath Tagore

আমারে ফিরায়ে লহ ওই বসুন্ধরে
কোলের সন্তান তব কোলের ভিতরে
বিপুল অঞ্চলতলে।  ওগো মা মৃন্ময়ী ,
তোমার মৃত্তিকা মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই
দিগ্বিদিকে আপনারে দিই বিস্তারিয়া
বসন্তের আনন্দের মতো।  বিদারিয়া
এ বক্ষপঞ্জর , টুটিয়া পাষানবন্ধ
সঙ্কীর্ণ প্রাচীর , আপনার নিরানন্দ
অন্ধ কারাগার - হিল্লোলিয়া , মর্মরিয়া
কম্পিয়া, স্খলিয়া, বিকিরিয়া, বিচ্ছুরিয়া ,
শিহরিয়া, সচকিয়া আলোকে পুলকে ,
প্রবাহিয়া চলে যাই সমস্ত ভূলোকে

Sworgo hoite biday - স্বর্গ হইতে বিদায় - Poem by Rabindranath Tagore

 ম্লান হয়ে এল কণ্ঠে মন্দারমল্লিকা,
হে মহেন্দ্র, নির্বাপিত জ্যোতির্ময় টিকা
মলিন ললাটে । পুণ্যবল হল ক্ষীণ,
আজি মোর স্বর্গ হতে বিদায়ের দিন
হে দেব, হে দেবীগণ । বর্ষ লক্ষশত 
যাপন করেছি স্বর্গে দেবতার মতো 
দেবলোকে । আজি শেষ বিচ্ছেদের ক্ষণে 
লেশমাত্র অশ্রুরেখা স্বর্গের নয়নে 
দেখা যাবে এই আশা ছিল । শোকহীন 
হৃদিহীন সুখস্বর্গভূমি উদাসীন 
চেয়ে আছে । লক্ষ লক্ষ বর্ষ তার
চক্ষের পলক নহে । অশ্বত্থশাখার 

Choddosho saal - ১৪০০ সাল - Poem by Rabindranath Tagore

  
             আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
                     কৌতুহলভরে,
             আজি হতে শতবর্ষ পরে !
আজিকার নব বসন্তের প্রভাতের আনন্দের
                     লেশমাত্র ভাগ,
আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
             আজিকার কোনো রক্তরাগ -
অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে
                         তোমাদের করে,
             আজি হতে শতবর্ষ পরে  ?।

Jete nahi dibo - যেতে নাহি দিব - Poem by Rabindranath Tagore

     
দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি, বেলা দ্বিপ্রহর
হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর ।
জনশুন্য পল্লীপথে ধূলি উড়ে যায়
মধ্যাহ্নবাতাসে। স্নিগ্ধ অশ্বত্থের ছায়
ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিনি জীর্ণ বস্ত্র পাতি
ঘুমায়ে পড়েছে।  যেন রৌদ্রামায়ি রাতি
ঝাঁ ঝাঁ করে চারি দিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম -
শুধু মোর ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম ।।
গিয়েছে আশিন। পূজার ছুটির শেষে
ফিরে  যেতে হবে আজি বহুদূর দেশে
 কর্মস্থানে।  ভৃত্যগণ ব্যস্ত হয়ে
বাঁধিছে জিনিস-পত্র দরাদড়ি লয়ে -
হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি এ ঘরে, ও ঘরে ।

Hing Ting Chhot - হিং টিং ছ্ট - A poem by Rabindranath Tagore

            হিং টিং ছ্ট
              স্বপ্নমঙ্গল

স্বপ্ন দেখেছেন রাত্রে হবুচন্দ্র ভূপ  ¬
অর্থ তার ভেবে ভেবে গবুচন্দ্র চুপ
শিয়রে বসিয়া যেন তিনটি বাঁদরে
উকুন বাছিতেছিল পরম আদরে ¬
একটু নড়িতে গেলে গালে মারে চড় ,
চোখে মুখে লাগে তার নখের আঁচড় ।
সহসা মিলালো তারা এল এক বেদে , 
'পাখি উড়ে গেছে' বলে মরে কেঁদে কেঁদে  ।
সম্মুখে রাজারে দেখি তুলি নিল ঘাড়ে ,
ঝুলায়ে বসায়ে দিল উচ্চ এক দাঁড়ে ।
নীচেতে দাঁড়ায়ে এক বুড়ি থুড়থুড়ি
হাসিয়া পায়ের তলে দেয় সুড়সুড়ি ।
রাজা বলে 'কি আপদ '  কেহ নাহি ছাড়ে ¬
পা দুটা তুলিতে চাহে, তুলিতে না পারে ।
পাখির মতন রাজা করে ছটফট
বেদে কানে কানে বলে ¬ হিং টিং ছট ।
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান ,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান ।।

Puraton bhrityo - পুরাতন ভৃত্য - Poem by Rabindranath Tagore


ভুতের মতন চেহারা যেমন নির্বোধ অতি ঘোর -
যা-কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর ।
উঠিতে বসিতে করি বাপান্তও, শুনেও শোনে না কানে -
যত পায় বেত পায় না বেতন, তবু না চেতন মানে ।
বড়ো প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ , চিৎকার করি 'কেষ্টা' -
যত করি তাড়া নাহি পায় সাড়া, খুঁজে ফিরি সারা দেশটা ।
তিনখানা দিলে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে -
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা ক'রে আনে ।
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে নিদ্রাটি আছে সাধা -
মহাকলরবে গালি দেই যবে 'পাজি হতভাগা গাধা'
দরজার পাশে দাড়িয়ে সে হাসে, দেখে জ্বলে যায় পিত্ত ।
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার - বড়ো পুরাতন ভৃত্য ।।

Dui bigha jomi - দুই বিঘা জমি - Poem by Rabindranath Tagore

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে ।
বাবু বলিলেন , 'বুঝেছ উপেন ? এ জমি লইব কিনে ।'
কাহিলাম আমি, 'তুমি ভূস্বামী , ভূমির অন্ত নাই -
চেয়ে দেখ মোর আছে বড়জোর মরিবার মত ঠাঁই ।'
শুনি রাজা কহে, ' বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা ,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা -
ওটা দিতে হবে ।' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি 
সজল চক্ষে, ' করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি ।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া ,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া !'
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে ,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, 'আচ্ছা , সে দেখা যাবে ।'

Premer Obhishek - প্রেমের অভিষেক - by Rabindranath Tagore - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


তুমি মোরে করেছ সম্রাট।  তুমি মোরে 
সাজায়েছো কন্ঠ মোর । তব রাজটিকা 
পরায়েছো গৌরবমুকুট ; পুষ্পডোরে 
দীপিছে ললাট মাঝে মহিমার শিখা 
অহর্নিশি।  আমার সকল দৈন্য লাজ ,
আমার ক্ষুদ্রতা যত , ঢাকিয়াছে আজ 
তব রাজ আস্তরণে।  হৃদিশয্যাতল 
শুভ্র দুগ্ধফেননিভ, কোমল শীতল ,
তারই মাঝে বসয়েছো।  সমস্ত জগৎ 
বাহিরে দাঁড়ায়ে আছে, নাহি পায় পথ 
সে অন্তর - অন্তঃপুরে।  নিভৃত সভায়