বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।


চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

শিয়াল পণ্ডিত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

 কুমির দেখলে, সে শিয়ালের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তখন সে ভাবলে, 'ও ঢের লেখাপড়া জানে, তাতেই খালি আমাকে ফাঁকি দেয়। আমি মূর্খ লোক, তাই তাকে আঁটতে পারি না।' অনেকক্ষণ ভেবে কুমির এই ঠিক করল যে, নিজের সাতটা ছেলেকে শিয়ালের কাছে দিয়ে খুব করে লেখাপড়া শেখাতে হবে। তার পরের দিনই সে ছানা সাতটাকে সঙ্গে করে শিয়ালের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হল। শিয়াল তখন তার গর্তের ভিতরে বসে কাঁকড়া খাচ্ছিল। কুমির এসে ডাকলে,


'শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত, বাড়ি আছ?' শিয়াল বাইরে এসে বললে, 'কী ভাই, কী মনে করে?'

কুমির বললে, 'ভাই, এই আমার ছেলে সাতটাকে তোমার কাছে এনেছি। মূর্খ হলে করে খেতে পারবে না। ভাই, তুমি যদি এদের একটু লেখাপড়া শিখিয়ে দাও।' শিয়াল বললে, 'সে আর বলতে? আমি সাতদিনে সাতজনকে পড়িয়ে পণ্ডিত করে দেব।' শুনে কুমির তো খুব খুশি হয়ে ছানা সাতটাকে রেখে চলে গেল।

তখন শিয়াল তাদের একটাকে আড়ালে নিয়ে বললে—

'পড় তো বাপু— কানা খানা গানা ঘানা,

কেমন লাগে কুমির ছানা?'

ডানপিটে - Daanpite - Poems of Sukumar Ray

বাপরে কি ডানপিটে ছেলে ! -
কোন দিন ফাঁসি যাবে নয় যাবে জেলে ।
একটা সে ভূত সেজে আঠা মেখে  মুখে ,
ঠাঁই ঠাঁই শিশি ভাঙে শ্লেট দিয়ে ঠুকে !
অন্যটা হামা দিয়ে আলমারি চড়ে ,
খাট থেকে রাগ ক'রে দুম্ দাম্ পড়ে !

কি মুস্কিল - Ki Muskil - Poems of Sukumar Ray

সব লিখেছে এই কেতাবে দুনিয়ার সব খবর যত ,
সরকারী সব অফিসখানার কোন সাহেবের কদর  কত ।
কেমন ক'রে চাটনি বানায়,  কেমন ক'রে পোলাও করে ,
হরেক রকম মুষ্টিযোগের বিধান লিখছে ফলাও করে 
সাবান কালি দাঁতের মাজন বানাবার সব কায়দা কেতা ,
পূজা পার্বন তিথির হিসাব শ্রাদ্ধবিধি লিখছে হেথা ।
সব লিখেছে , কেবল দেখ পাচ্ছিনেকো লেখা কোথায় -
পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া কেমন ক'রে ঠেকাব তায় !  

Narad ! Narad ! - নারদ ! নারদ ! - Poems of Sukumar Ray

''হ্যাঁরে হ্যাঁরে তুই নাকি কাল শাদা বলছিলি লাল ?
(আর) সেদিন নাকি রাত্রি জুড়ে নাক ডেকেছিস বিশ্রী সুরে ?
(আর) তোদের পোষা বেড়ালগুলো শুচু নাকি বেজায় হলো ?
(আর) এই যে শুনি তোদের বাড়ি কেউ নাকি রাখে না দাড়ি ?
ক্যান রে ব্যাটা ইস্টুপিড ? ঠেঙিয়ে তোরে করবো টিট !''
''চোপড়াও তুমি স্পিকটি নট , মারব রেগে পটাপট -''

Golpo Bola - গল্প বলা - Poems of Sukumar Ray

''এক যে রাজা - থাম না দাদা ,
রাজা নয় সে, রাজ পেয়াদা |''
''তার যে মাতুল'' - ''মাতুল কি সে ? 
সবাই জানে সে তার পিশে |''
''তার ছিল এক ছাগল ছানা '' -
''ছাগলের কি গজায় ডানা ?''
''একদিন তার ছাতের প'রে '' -
''ছাত কোথা হে - টিনের ঘরে ?''

Daare daare droom - দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম - Poems of Sukumar Ray

ছুটছে মটর ঘটর ঘটর ছুটছে গাড়ী জুড়ি ,
ছুটছে লোকে নানান ঝোঁকে করছে হুড়োহুড়ি ;
ছুটছে কত খ্যাপার মতো পড়ছে  কত চাপা ,
সাহেব মেমে থমকে থেমে বলছে 'মামা পাপা ' 
আমরা তবু তবলা ঠুকে গাচ্ছি কেমন তেড়ে 
''দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম ! দেড়ে দেড়ে দেড়ে !''

Ekushe aain - একুশে আইন - Sukumar Ray

শিব ঠাকুরের আপন দেশে 
আইন  কানুন সর্বনেশে !
কেউ যদি যায় পিছলে পড়ে 
প্যাদা এসে পাকড়ে ধরে ,
কাজীর কাছে হয় বিচার
            একুশ টাকা দণ্ড তার ।।

খোকা ঘুমায় - Khoka ghumay - Poems of Sukumar Ray

কোনখানে কোন সুদূর দেশে, কোন মায়ের বুকে,
কাদের খোকা মিষ্টি এমন ঘুমায় মনের সুখে ?
অজানা কোন দেশে সেথা কোনখানে তার ঘর ?
কোন সমুদ্র, কত নদী , কত দেশের পর ?
কেমন সুরে কি বলে মা ঘুমপাড়ানি গানে ,
খোকার চোখে নিত্যি সেথা ঘুমটি ডেকে আনে ?

শিশুর দেহ -Shishur deho - Poems of Sukumar Ray


চশমা-আটা পন্ডিতে কয়, শিশুর দেহ দেখে -
'হাড়ের পরে মাংস গেঁথে , চামড়া দিয়ে ঢেকে,
শিরার  মাঝে রক্ত দিয়ে, ফুসফুসেতে বায়ু,
বাধলো দেহ সুঠাম করে পেশী এবং স্নায়ু ।'
কবি বলেন, 'শিশুর মুখে হেরি তরুণ রবি,
উৎসারিত আনন্দে তার জাগে জগৎ ছবি,

শ্রাবণে - Shrabone - Poems of Sukumar Ray

জল ঝরে, জল ঝরে, সারাদিন সারারাত - 
অফুরান নামতায় বাদলের ধারাপাত 
আকাশের মুখঢাকা, ধোয়ামাখা চারিধার,
পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমাঝম বারিধার ।
স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায় ,
নদীনালা ঘোলাজল ভরে ওঠে ভরসায় ।