Kritadas - ক্রীতদাস - Bengali poem by Subhro

শরীর কোমর অবশ আমার করুণ চেহারা ,
তারই মধ্যে বয়স খানা করে যাচ্ছে তাড়া । 
সকাল সন্ধ্যে কাজের চাপে শরীর নাজেহাল ,
চশমার কাঁচ হচ্ছে পুরু, আর বাড়ছে কপাল। 
সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত শরীর ক্ষীণ,
আলোর পর্দায় তাকিয়ে থেকে মাথাটা ঝিন ঝিন ।
চানের ঘরে, খেতে গিয়ে, শুয়ে কিংবা বসে ,
কাজের কথাই ভাবি শুধু গিয়ে শেষমেষে । 
কখনো বা ভাবি আবার কি হবে কাজ করে 
মনের মতন গিয়ে কোথাও থাকি সুখের ঘরে । 
আধেক জীবন পার করলাম আর রয়েছে আধা 
এমনি করেই পার করবো ? আমি আস্ত গাধা । 
ভাবতে ভাবতে আকাশ পাতাল বিছানাতে বসে 
জীবনটার অঙ্ক কষি, বালিশ নিয়ে পাশে । 
ছোটবেলার দুই আনা শেষ করেছি খেলে ,
তিন আনার পড়াশোনা বড়ো হবো বলে । 
তখন মাথার ঠিক কিছু নেই বড় হয়েছি সবে ,
খরচ করলাম তিন আনা বড় হলাম ভেবে । 
আমি ভাবি মনে মনে, বাজে খরচ তো করিনি -
আধুলি কখন বেরিয়ে গেছে বুঝতে শুধু পারিনি । 
বাকি আধুলির কি করবো ভাবছি গুনে গুনে  ,
ছোটবেলার দুই আনার কথা পড়লো মনে ।  
ভালোই হতো আরেকটি বার ছোটবেলার মতো ,
দুই আনার ছোটবেলা চারটি কেনা যেতো । 
ভেজা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতাম গেঞ্জি পড়া বুক ,
ভিজিয়ে চটি নোংরা জলে শরীর অসুখ । 
মায়ের বকা খেতাম আবার আদর মাখা গলায় 
জ্বরের গায়ে হাত বোলাত সিঁদুরে শাঁখায় । 
নাপিত কুলি ধোবা চামার মালির ছেলে মেয়ে ,
এক সঙ্গেই খেলতে যেতাম দেখতো না কেউ চেয়ে। 
লুকোচুরি, গোল্লাছুট হরেক রকম খেলা ,
দাড়িয়াবান্দা কিসব নাম সকাল সন্ধ্যে বেলা। 
সূয্যি ডুবলে পুজোর ঘরে মায়ের সাথে বসে 
উলূর সঙ্গে শাঁখ বাঁজাতাম, প্রসাদ পাওয়ার আশে । 
বাবার সাথে রাতের আকাশ, ধ্রুব তারার গল্প ,
কালপুরুষ, সপ্তর্ষি তখন চিনি অল্প স্বল্প ।
শীতের রাতে শোবার ঘরে মায়ের সাথে শুয়ে 
ব্রহ্মদৈত্যির গল্প শুনতাম, কাঁটা দিতো গায়ে। 
হঠাৎ আমি ভাবি আবার, এ যে ভাবাই সার ,
সেই দু'আনা আর কি পাবো ? গেছে যে একবার । 
যেমন করে আধলা গেছে, বাকিটাও হোক যমজ তার ,
'জীবন বালুতে পদচিহ্ন', ওসব ভাটের লেকচার । 
আবার ভাবি যে আধুলি হাতে আছে এখন আমার 
সেই টুকুকেই করতে পারি, চার-দু'আনা ছোটবেলার। 
একটু শুধু মনের জোর আর একটু খানি নেশা ,
এখনও ঘোরাতে পারি জীবন চাকার দিশা । 
কিন্তু কোথায় যেন, চলার পথে, ঠিক জানিনা কোথায় ,
হারিয়ে ফেলেছি মনের সাহস, কোন অজানা ঠিকানায়।  
পেছন থেকে কেই বা আমায়, কেন এমন ডাকে 
যেন আমি হারিয়ে যাবো সামনেরই বাঁকে। 
তাই যতই ভাবি , অঙ্ক কষি জীবন খাতার পাতায় 
রাতের খেয়াল ঘুমে ডোবে , ভোর হলে হারায়। 
সকাল হতেই কাজের নেশা আসে দেয়াল বেয়ে 
রাতের কথা ভুলে গিয়ে হা করে রই চেয়ে । 
কিসের এতো কাজের তারা কেমনতরো কাজ , 
না করলেই মুন্ডুচ্ছেদ কোন সে মহারাজ !
তবু কেমন বোকার মতন কাজই শুধু জানি ,
কাজের আমি ক্রীতদাস কাজের  কথাই মানি । 
অফিস কামাই করছি নাতো চাইছি না তো ছুটি ,
বস চাইলেই ফাইল হাতে চলছি গুটি গুটি ।  
সকাল বিকেল সন্ধ্যে দুপুর কাজের নেশায় বুদ্, 
কাজের শেষে ফাউ মিলছে অন্য কাজের সুদ ।
ওপর থেকে সামাল দাও রোগা বসের মুড ,
না শুনলেই দুর্বাশা আর হা বললেই গুড । 
ঘুষ নেওয়া টা পাপ কাজ বাপ্-কাকারা বলত। 
তাই বাড়ি বলতে ভাড়াঘর, গাড়ি বলতে অল্টো।  
তারই মধ্যে ভালোবাসি, ফোনে মায়ের গলার স্বর 
'ভালো আছিস?  খাওয়া হলো ? শরীরের যত্ন কর'। 

                                                                        ~ শুভ্র 

No comments:

Post a Comment