শরীর কোমর অবশ আমার করুণ চেহারা ,
তারই মধ্যে বয়স খানা করে যাচ্ছে তাড়া ।
সকাল সন্ধ্যে কাজের চাপে শরীর নাজেহাল ,
চশমার কাঁচ হচ্ছে পুরু, আর বাড়ছে কপাল।
চশমার কাঁচ হচ্ছে পুরু, আর বাড়ছে কপাল।
সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত শরীর ক্ষীণ,
কাজের কথাই ভাবি শুধু গিয়ে শেষমেষে ।
কখনো বা ভাবি আবার কি হবে কাজ করে
মনের মতন গিয়ে কোথাও থাকি সুখের ঘরে ।
আধেক জীবন পার করলাম আর রয়েছে আধা
এমনি করেই পার করবো ? আমি আস্ত গাধা ।
ভাবতে ভাবতে আকাশ পাতাল বিছানাতে বসে
জীবনটার অঙ্ক কষি, বালিশ নিয়ে পাশে ।
ছোটবেলার দুই আনা শেষ করেছি খেলে ,
তিন আনার পড়াশোনা বড়ো হবো বলে ।
তখন মাথার ঠিক কিছু নেই বড় হয়েছি সবে ,
খরচ করলাম তিন আনা বড় হলাম ভেবে ।
আমি ভাবি মনে মনে, বাজে খরচ তো করিনি -
আধুলি কখন বেরিয়ে গেছে বুঝতে শুধু পারিনি ।
বাকি আধুলির কি করবো ভাবছি গুনে গুনে ,
ছোটবেলার দুই আনার কথা পড়লো মনে ।
ভালোই হতো আরেকটি বার ছোটবেলার মতো ,
দুই আনার ছোটবেলা চারটি কেনা যেতো ।
ভেজা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতাম গেঞ্জি পড়া বুক ,
ভিজিয়ে চটি নোংরা জলে শরীর অসুখ ।
মায়ের বকা খেতাম আবার আদর মাখা গলায়
জ্বরের গায়ে হাত বোলাত সিঁদুরে শাঁখায় ।
নাপিত কুলি ধোবা চামার মালির ছেলে মেয়ে ,
এক সঙ্গেই খেলতে যেতাম দেখতো না কেউ চেয়ে।
লুকোচুরি, গোল্লাছুট হরেক রকম খেলা ,
দাড়িয়াবান্দা কিসব নাম সকাল সন্ধ্যে বেলা।
সূয্যি ডুবলে পুজোর ঘরে মায়ের সাথে বসে
উলূর সঙ্গে শাঁখ বাঁজাতাম, প্রসাদ পাওয়ার আশে ।
বাবার সাথে রাতের আকাশ, ধ্রুব তারার গল্প ,
কালপুরুষ, সপ্তর্ষি তখন চিনি অল্প স্বল্প ।
শীতের রাতে শোবার ঘরে মায়ের সাথে শুয়ে
ব্রহ্মদৈত্যির গল্প শুনতাম, কাঁটা দিতো গায়ে।
হঠাৎ আমি ভাবি আবার, এ যে ভাবাই সার ,
সেই দু'আনা আর কি পাবো ? গেছে যে একবার ।
যেমন করে আধলা গেছে, বাকিটাও হোক যমজ তার ,
'জীবন বালুতে পদচিহ্ন', ওসব ভাটের লেকচার ।
আবার ভাবি যে আধুলি হাতে আছে এখন আমার
সেই টুকুকেই করতে পারি, চার-দু'আনা ছোটবেলার।
একটু শুধু মনের জোর আর একটু খানি নেশা ,
এখনও ঘোরাতে পারি জীবন চাকার দিশা ।
কিন্তু কোথায় যেন, চলার পথে, ঠিক জানিনা কোথায় ,
হারিয়ে ফেলেছি মনের সাহস, কোন অজানা ঠিকানায়।
পেছন থেকে কেই বা আমায়, কেন এমন ডাকে
যেন আমি হারিয়ে যাবো সামনেরই বাঁকে।
তাই যতই ভাবি , অঙ্ক কষি জীবন খাতার পাতায়
রাতের খেয়াল ঘুমে ডোবে , ভোর হলে হারায়।
সকাল হতেই কাজের নেশা আসে দেয়াল বেয়ে
রাতের কথা ভুলে গিয়ে হা করে রই চেয়ে ।
কিসের এতো কাজের তারা কেমনতরো কাজ ,
না করলেই মুন্ডুচ্ছেদ কোন সে মহারাজ !
তবু কেমন বোকার মতন কাজই শুধু জানি ,
কাজের আমি ক্রীতদাস কাজের কথাই মানি ।
অফিস কামাই করছি নাতো চাইছি না তো ছুটি ,
বস চাইলেই ফাইল হাতে চলছি গুটি গুটি ।
সকাল বিকেল সন্ধ্যে দুপুর কাজের নেশায় বুদ্,
সকাল বিকেল সন্ধ্যে দুপুর কাজের নেশায় বুদ্,
কাজের শেষে ফাউ মিলছে অন্য কাজের সুদ ।
ওপর থেকে সামাল দাও রোগা বসের মুড ,
না শুনলেই দুর্বাশা আর হা বললেই গুড ।
ঘুষ নেওয়া টা পাপ কাজ বাপ্-কাকারা বলত।
তাই বাড়ি বলতে ভাড়াঘর, গাড়ি বলতে অল্টো।
তারই মধ্যে ভালোবাসি, ফোনে মায়ের গলার স্বর
'ভালো আছিস? খাওয়া হলো ? শরীরের যত্ন কর'।
~ শুভ্র
No comments:
Post a Comment