Songs of Bhupen Hazarika - ভুপেন হাজরিকার বাংলা গান

সাগর সঙ্গমে

সাগর সঙ্গমে
সাগর সঙ্গমে
সাঁতার কেটেছি কত
কখনো তো হই নাই ক্লান্ত

সাগর সঙ্গমে
সাঁতার কেটেছি কত
কখনো তো হই নাই ক্লান্ত


তথাপি মনের মোর প্রশান্ত সাগরের
ঊর্মিমালা অশান্ত

সাগর সঙ্গমে

মোর মনের প্রশান্ত সাগরের বক্ষে
জোয়ারের নাই আজি অন্ত
অজস্র লহরী নব নব গতিতে
এনে দেয় আশা অফুরন্ত
সাগর সঙ্গমে


মোর প্রশান্ত পারেরো কত মহাজীবনের শান্তি আজি আক্রান্ত
নব নব সৃষ্টিতে দৈত্য দানবে করে নিষ্ঠুর আঘাত অবিশ্রান্ত
তাইতো মনের মোর প্রশান্ত সাগরের 
ঊর্মিমালা অশান্ত
সাগর সঙ্গমে

ধ্বংসের আঘাতে দিয়ে যায় প্রতিঘাত
সৃষ্টির সেনানী অনন্ত
সেই সংঘাত আনে মোর প্রশান্ত সাগরে
প্রগতির নূতন দিগন্ত
তাইতো মনের মোর প্রশান্ত সাগরের
ঊর্মিমালা অশান্ত
সাগর সঙ্গমে
সাগর সঙ্গমে


মোর গভীর প্রশান্ত সাগরের শক্তি
ধ্বংস কে করে দিগভ্রান্ত
অগণন মানুষের শান্তির আভিযান
সৃষ্টিকামী জীবন্ত
তাইতো মনের মোর
প্রশান্ত সাগরের ঊর্মিমালা অশান্ত
সাগর সঙ্গমে
সাগর সঙ্গমে



আজ জীবন খুঁজে পাবি

আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়
আয় মরণ ভুলে গিয়ে ছুটে ছুটে আয়
হাসি নিয়ে আয় আর বাঁশি নিয়ে আয়
আজ যুগের নতুন দিগন্তে সব ছুটে ছুটে আয়
আজ ফাগুন ফুলের আনন্দে সব ছুটে ছুটে আয়
মনের চড়াই পাখিটির বাঁধন খুলে দে
শিকল খুলে মেঘের নীড়ে আজ উড়িয়ে দে
যত বন্ধ হাজার দুয়ার ভেঙে আয়রে ছুটে আয়
সময় ধারাপাতে দেখো নেই বিয়োগের ঘর
চলার পথে পথে পথের বাঁকে নেই তো আপন পর
কি আর পাবি কি আর দিবি আঙ্গুল গুণে কি
লাভের খাতায় হিসাব করে জীবন ভরে কি
আজ পাওনা দেনা মিটিয়ে দিয়ে আয়রে ছুটে আয়
আর ভালবাসার পান্না হীরে কুড়িয়ে নিয়ে আয়
এই ফাগুন ফুলের আনন্দে সব ছুটে ছুটে আয়




গঙ্গা আমার মা 

গঙ্গা আমার মা   পদ্মা আমার মা

ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা
গঙ্গা আমার মা
পদ্মা আমার মা
একই আকাশ একই বাতাস
এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস
দোয়েল কোয়েল পাখির ঠোঁটে

দোয়েল কোয়েল পাখির ঠোটে

একই মুর্ছনা
একই মুর্ছনা
ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা
গঙ্গা আমার মা
পদ্মা আমার মা
এপার ওপার কোন পাড়ে জানি না
ও আমি সব খানেতে আছি
গাঙ্গের জলে ভাসিয়ে ডিংগা
ও আমি পদ্মাতে হই মাঝি
এপার ওপার কোন পাড়ে জানি না
শংখ চিলের ভাসিয়ে ডানা
ও আমি দুই নদীতে নাচি
এপার ওপার কোন পাড়ে জানি না
একই আশা ভালবাসা কান্না হাসির একই ভাষা
দুঃখ সুখের বুকের মাঝে
দুঃখ সুখের বুকের মাঝে

একই যন্ত্রনা
একই যন্ত্রনা
ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা।
গঙ্গা আমার মা
পদ্মা আমার মা
গঙ্গা আমার মা
পদ্মা আমার মা



বিস্তীর্ণ দুপারের


বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের
হাহাকার শুনেও,
নিঃশব্দে নীরবে, ও গঙ্গা তুমি
গঙ্গা বইছ কেন ?


বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের
হাহাকার শুনেও,
নিঃশব্দে নীরবে, ও গঙ্গা তুমি
গঙ্গা বইছ কেন ?

নৈতিকতার স্খলন দেখেও
মানবতার পতন দেখেও
নির্লজ্জ অলস ভাবে বইছ কেন ?

বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের
হাহাকার শুনেও,
নিঃশব্দে নীরবে, ও গঙ্গা তুমি
গঙ্গা বইছ কেন ?

জ্ঞানবিহীন নিরক্ষরের
খাদ্যবিহীন নাগরিকের
নেতৃবিহীনতায় মৌন কেন?
সহস্র বরষার
উন্মাদনার
মন্ত্র দিয়ে, লক্ষজনেরে
সবল সংগ্রামী, আর অগ্রগামী
করে তোলো না কেন ?

ব্যক্তি যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক,
সমষ্টি যদি, ব্যক্তিত্বরহিত,
তবে শিথিল সমাজকে ভাঙো না কেন ?
সহস্র বরষার
উন্মাদনার
মন্ত্র দিয়ে, লক্ষজনেরে
সবল সংগ্রামী, আর অগ্রগামী
করে তোলো না কেন?

স্রোতস্বিনী কেন নাহি বও ?
তুমি নিশ্চয়ই জাহ্নবী নও
তাহলে, প্রেরণা দাও না কেন ?
উন্মত্ত ধরার
কুরুক্ষেত্রের
শরশয্যাকে আলিঙ্গন করা
লক্ষকোটি ভারতবাসীকে, জাগালে না কেন?

বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের
হাহাকার শুনেও,
নিঃশব্দে নীরবে, ও গঙ্গা তুমি
গঙ্গা বইছ কেন ?

বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের
হাহাকার শুনেও,
নিঃশব্দে নীরবে, ও গঙ্গা তুমি
গঙ্গা বইছ কেন ?




আমি এক যাযাবর 


আমি এক যাযাবর
আমি এক যাযাবর
পৃথিবী আমাকে আপন করেছে ভুলেছি নিজের ঘর
আমি এক যাযাবর
আমি এক যাযাবর

আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভল্গার রূপ দেখেছি
অটোয়ার থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে পেরিসের ধুলো মেখেছি
আমি ইলোরার থেকে রঙ নিয়ে দূরে শিকাগো শহরে দিয়েছি
গালিবের শের তাসখন্দের মিনারে বসে শুনেছি 
মার্ক টোয়েনের সমাধিতে বসে গরকির কোথা বলেছি
বারে বারে আমি পথের টানে পথকে করেছি ঘর
তাই আমি যাযাবর
তাই আমি যাযাবর


বহু যাযাবর লক্ষ্যবিহীন আমার রয়েছে পণ
রঙের খনি যেখানে দেখেছি রাঙিয়ে নিয়েছি মন
আমি দেখেছি  অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকার শারী
তার ছায়াতেই দেখেছি অনেক গৃহহীন নরনারী
আমি দেখেছি অনেক গোলাপ বকুল ফুটে আছে থরে থরে
আবার দেখেছি নাফোটা ফুলের কলিরা ঝরে গেছে অনাদরে
প্রেমহীন ভালবাসা দেশে দেশে ভেঙেছে সুখের ঘর
পথের মানুষ আপন হয়েছে আপন হয়েছে পর

তাই আমি যাযাবর
আমি এক যাযাবর
আমি এক যাযাবর
আমি এক যাযাবর
আমি এক যাযাবর
আমি এক যাযাবর



শীতের শিশির ভেজা রাতে


শীতের শিশির ভেজা রাতে
শিশিরে ভেজানো রাতে
শিশিরে ভেজানো রাতে
শিশিরে ভেজানো রাতে

বস্ত্রবিহীন কোন খেত মজুরের 
ভেঙ্গে পড়া  কুটিরের
ধিকি ধিকি জ্বলে থাকা তুষে ঢাকা আগুনের
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই

শিশিরে ভেজানো রাতে
শিশিরে ভেজানো রাতে


শিশিরে ভেজানো রাতে
শিশিরে ভেজানো রাতে
সংখ্যালঘু কোন সম্প্রদায়ের
ভয়ার্ত মানুষের নাফোটা আর্তনাদ
যখন গুমরে কাঁদে আমি যেন তার
নিরাপত্তা হই
নিরাপত্তা হই


শিশিরে ভেজানো রাতে
কন্ঠরুদ্ধ কোন সুগায়কের
প্রভাত আনতে পারা একটি অমর গান
নিজেই প্রকাশ করে
আমি যেন তার সুধাকণ্ঠ হই

রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই
প্রচণ্ড যেন এক প্রতাপ হই
আমি যেন এক নিরাপত্তা হই
আমি যেন এক সুধাকণ্ঠ হই

শীতের শিশির ভেজা রাতে
শিশিরে ভেজানো রাতে



প্রতিধ্বনি শুনি


মোর গায়েরো সীমানার
পাহারের ওপারে
নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি
প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি


কান পেতে শুনি আমি বুঝিতে না পারি 
চোখ মেলে দেখি আমি দেখিতে না পারি
চোখ বুজে ভাবি আমি ধরিতে না পারি
হাজার পাহাড় আমি ডিঙ্গোতে না পারি 
নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি
প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি

হতে পারে কোন যুবতীর শোকভরা কথা
হতে পারে কোন ঠাকুমার রাতের রূপকথা
হতে পারে কোন কৃষকের বুক ভরা ব্যাথা
চেনা চেনা  সুরটিকে কিছুতে না চিনি
নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি
প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি

শেষ হল কোন যুবতীর শোকভরা কথা
শেষ হল কোন ঠাকুমার বলা রূপকথা
শেষ হল কোন কৃষকের বুক ভরা ব্যাথা
চেনা চেনা সুরটিকে কিছুতে না চিনি
নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বিনি শুনি
প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি
প্রতিধ্বনি শুনি

মোর কালো চুলে সকালের সোনালী রোদ পরে
চোখের পাতায় লেগে থাকা কুয়াশা যায় সরে
জেগে ওঠা মানুষের হাজার চিৎকারে
আকাশ ছোঁয়া অনেক বাধার পাহাড় ভেঙে পরে
আকাশ ছোঁয়া অনেক বাধার পাহাড় ভেঙে পরে
মানব সাগরের কোলাহল শুনি
নতুন দিনের যেন পদধ্বনি শুনি 
পদধ্বনি শুনি
পদধ্বনি শুনি

মোর গায়েরো সীমানার পাহারের ওপারে
নতুন দিনের যেন প্রতিধ্বনি শুনি
প্রতিধ্বনি শুনি
প্রতিধ্বনি শুনি


No comments:

Post a Comment