এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।
হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে নমি নর দেবতারে
উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন করি তারে
ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর , নদী-জপমালা-ধৃত প্রান্তর,
হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীর
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ।।
কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এলো কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন -
শাক-হুন-দল পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন।
পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার ,
দিবে আর নিবে মিলবে মিলিবে যাবে না ফিরে -
এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে ।।
রণাধারা বাহি জয়গান গাহি উন্মাদকলরবে
ভেদি মরুপথ গিরিপর্বত যারা এসেছিলো সবে
তারা মোর মাঝে সবাই বিরাজে কেহ নহে নহে দূর -
আমার শোনিতে রয়েছে ধ্বনিতে তার বিচিত্র সুর।
হে রুদ্রবীণা , বাজো বাজো , বাজো ঘৃণা করি দূরে আছে যারা আজও
বন্ধ নাশিবে - তারাও আসিবে দাঁড়াবে ঘিরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ।।
হেথা একদিন বিরাম বিহীন মহা-ওঙ্কারধ্বনি
হৃদয়তন্ত্রে একের মন্ত্রে উঠেছিল রণরণি।
তপস্যাবলে একের অনলে বহরে আহুতি দিয়া
বিভেদ ভুলিল , জাগায়ে তুলিল একটি বিরাট হিয়া।
সেই সাধনার সে আরাধনার যজ্ঞশালার খোলা আজি দ্বার
হেথায় সবারে হবে মিলিবারে আনত শিরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ।।
সেই হোমানলে হেরো আজি জ্বলে দুঃখের রক্তশিখা -
হবে তা সহিতে , মর্মে দহিতে আছে সে ভাগ্যে লিখা।
এ দুঃখবহন করো মোর মন, শোন রে একের ডাক -
যত লাজ ভয় করো করো জয়, অপমান দূরে যাক।
দুঃসহ ব্যাথা হয়ে অবসান জন্ম লভিবে কি বিশাল প্রাণ
পোহায় রজনী , জাগিছে জননী বিপুল নীড়ে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ।।
এসো হে আর্য , এসো অনার্য , হিন্দু মুসলমান -
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ , এসো এসো খ্রিস্টান।
এস ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।
এস হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার।
মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা , মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা
সবার-পরশে-পবিত্র-করা তীর্থনীরে -
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ।।
No comments:
Post a Comment